খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: এক শিক্ষককে বরখাস্ত, দুজনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণকারী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তিন শিক্ষকের মধ্যে একজনকে বরখাস্ত ও দুজনকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১২তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার বেলা তিনটার দিকে সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আগের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তই এবারের সিন্ডিকেট সভায় বহাল রাখা হয়েছে। আগামীকাল রোববার সভার সিদ্ধান্ত রেজল্যুশন করে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর একই বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণ করা হয়েছে।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধি অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হলে ওই কর্মচারী ভবিষ্যতে অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে অথবা কোনো আইন বলে বা আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোনো সংস্থায় নিয়োগ লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে চাকরি থেকে অপসারিত হলে কর্মচারী পুনর্নিয়োগ লাভের অযোগ্য হবেন না।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল বলেন, এই ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন থেকে শুরু করে কোনো কার্যক্রমেই তাঁদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন, সেটাও তাঁদের দেওয়া হয়নি। তাঁরা তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন, সেটাও আমলে নেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে প্রশাসন যে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের কাগজপত্র হাতে পেলে তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি পাঁচ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। বেতন-ফি কমানো, আবাসনসংকট সমাধানসহ পাঁচ দফা দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের। এর প্রায় ৯ মাস পর গত ১৩ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে ওই তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। ওই চিঠির জবাব দেওয়া হলে গত ৯ নভেম্বর আরেকটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২৩ নভেম্বরের ওই চিঠি জবাব দেওয়া হলে ২৪ নভেম্বর ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবারও চিঠি দিয়ে ১০ ডিসেম্বর হাজির হয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কাজে সহযোগিতা করার জন্য ওই তিন শিক্ষককে ডাকা হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর বিশেষ সিন্ডিকেট ডেকে আবারও তিনজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি ওই চিঠির জবাব দেন শিক্ষকেরা। এরপর ১৮ জানুয়ারি সোমবার সিন্ডিকেট করে চূড়ান্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার সকালে চাকরিচ্যুত ও অপসারণ করার আগের চূড়ান্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ ওই তিন শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। ২১ জানুয়ারি বেলা দুইটার মধ্যে ওই চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছিল।