খুলনা বিভাগে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশ কিছুটা কমেছে। তবে ডেঙ্গু নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় মানুষের মধ্যে এই জ্বর নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বিভাগের বিভিন্ন উপজেলাতেও ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে ঢাকা সফরের ইতিহাস যেমন আছে, ঢাকায় না গিয়েও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, এমন রোগীও আছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের আট জেলায় একজন করে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলো। বছরের প্রথম সাড়ে সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট) ডেঙ্গু শনাক্তের সংখ্যা ৫০ জন ছিল। গত ১৪ দিনে বাকি ৫০ জন শনাক্ত হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আটজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে বিভাগে বর্তমানে ১৬ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসাধীন। এই ১৬ জনের মধ্যে খুলনার হাসপাতালে ৮ জন, নড়াইল ও কুষ্টিয়ার হাসপাতালে ২ জন করে, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে ১ জন করে চিকিৎসাধীন আছে।
ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৮২ জন। ৯ আগস্ট সাইফুল ইসলাম (৩৬) নামের এক যুবক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বাড়ি খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার শেখপাড়ায়। এটাই এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে বছরের একমাত্র মৃত্যু। আর একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চলতি বছর খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে যশোরের হাসপাতালে ৩৫ জন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১৭ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিভাগে ১১ হাজার ৪৭৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ওই বছর ডেঙ্গুতে ৩৯ জন প্রাণ হারায়। খুলনা জেলায় ওই বছর ২ হাজার ৯৫ জন আক্রান্ত হয়ে ২৬ জন মারা যায়। গত বছর বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১০৪ জন। এর মধ্যে মারা যায় একজন।
খুলনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটের মুখপাত্র উৎপল কুমার চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। ডেঙ্গুর বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঘরের চারপাশ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি এডিসের হাত থেকে বাঁচতে হলে দিনে ও রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। এই সময়ে বাড়িতে কারও জ্বর হলে দেরি না করে কোভিড এবং ডেঙ্গু দুটি পরীক্ষাই করিয়ে নিতে হবে বলে মত দেন তিনি।