বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতফেরত বাংলাদেশির সংখ্যা ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ২ হাজার ৫৬৪ জন। তাঁদের খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গতকাল রোববার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটাই ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ।
এরই মধ্যে গতকাল ও আজ সোমবার ভারত থেকে নতুন করে আরও ১৫০ জনের বেশি মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আজ দিনভর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনলাইন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, রোববার ১০২ জন ও সোমবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ৩০ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। রোববার যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৫২ জনকে মাগুরায়, ২৩ জনকে নড়াইলে ও ২৭ জনকে যশোরের বিভিন্ন হোটেলে রাখা হয়েছে। আর সোমবার আসা ব্যক্তিদের বাগেরহাট জেলায় রাখার কথা।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁদের বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে যশোর জেলা ও শার্শা উপজেলা প্রশাসন। নিজ খরচে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, এমন মুচলেকা দিয়েই তবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে যাঁরা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, তাঁদের যেখানে রাখা হবে, সেই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খরচ বহন করা হচ্ছে।
ধারণক্ষমতা পেরোনোর পর নতুন ভারতফেরত লোকজনকে কীভাবে কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে, জানতে চাইলে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সুবাস চন্দ্র সাহা বলেন, সোমবার ৬ জন কোয়ারেন্টিন মুক্ত হবেন। তাঁদের ছাড়পত্র সনদ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার আরও ১৪০ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এর ফলে জায়গা কিছুটা ফাঁকা হবে। তখন ওই সংখ্যক মানুষকে আবার কোয়ারেন্টিনে রাখতে অসুবিধা হবে না।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁদের বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে যশোর জেলা ও শার্শা উপজেলা প্রশাসন।
যশোরের শার্শার ইউএনও মীর আলিফ রেজা বলেন, কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য ভাড়া করা গাড়িতে পর্যাপ্ত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভারতফেরতদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। তবে ঈদের আগে আর হয়তো আসবেন না বলে মনে করছেন তিনি।
ভারতফেরতদের কোয়ারেন্টিন সেন্টারে আনা-নেওয়া, খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ বহন করছে যেখানে রাখা হচ্ছে, সেখানকার প্রশাসন। তবে এখনো ওই বাবদ সরকার থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। খুলনা জেলায় ১৩টি সেন্টারে ৫৩৫ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে রাখার জন্য জায়গা প্রস্তুত করতে বলেছে বিভাগীয় প্রশাসন।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট জেলার ১৩টি কোয়ারেন্টিন সেন্টারের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। গরিব ব্যক্তিদের থাকা ও খাওয়ার খরচ বহন করছে জেলা প্রশাসন কার্যালয়। এর বাইরে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এলে তা তাৎক্ষণিক পরিপালন করা হচ্ছে।
প্রথম দিকে ধারণা ছিল খুব বেশি মানুষ হয়তো ভারত থেকে আসবেন না। এ কারণে যশোর ও এর আশপাশে কয়েকটি জেলায় কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ৪ মের পর দেখা গেল, ওই জায়গায় আর সংকুলান হচ্ছে না। এ কারণে বিভাগের বাকি জেলাগুলোতেও কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।মো. ইসমাইল হোসেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার
খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোতে চিকিৎসকদের একটি দল কাজ করছে। সেখানে কারও প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হচ্ছে। কাউকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলে তা–ও করা হচ্ছে। এর বাইরে যাবতীয় কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
৮ মে পর্যন্ত ভারত থেকে দেশে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে মোট ১৩ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। আর তাঁদের সহযাত্রী হিসেবে ছিলেন ১২ জন। এ ছাড়া ২৩টি মরদেহ ও তার সঙ্গে ১৩ জন দেশে এসেছেন। সম্প্রতি ভারত থেকে আসা যশোরে কোয়ারেন্টিনে থাকা ২ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন ধরা পড়েছে। তবে তাঁদের মধ্যে মারাত্মক কোনো উপসর্গ নেই। করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে।
গত ২৬ এপ্রিল থেকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও করোনার ভারতীয় ধরনের বিস্তার রোধে ভারতীয় সীমান্ত বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে বিশেষ বিবেচনায় যাঁদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমন ব্যক্তিদের দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে যশোরের বেনাপোল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালমনিরহাট জেলার সীমান্ত ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তী সময়ে শুধু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। ভারতফেরতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধানে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২৬ এপ্রিল ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ৬ জন। তাঁদের বেনাপোলের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এরপর ভারতফেরতদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। ২৭ এপ্রিল ১৪০ জন, ২৮ এপ্রিল ৩০৭ জন, ২৯ এপ্রিল ২৪৩ জন, ৩০ এপ্রিল ২৪২ জন, ১ মে ২৩৩ জন, ২ মে ৮৮ জন, ৩ মে ১২০ জন, ৪ মে ১৯৮ জন, ৫ মে ৩০৮ জন, ৬ মে ৩১৮ জন, ৭ মে ২৭৬ জন ও ৮ মে ৮৫ জন ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন।
রোববার সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রথম দিকে ধারণা ছিল খুব বেশি মানুষ হয়তো ভারত থেকে আসবেন না। এ কারণে যশোর ও এর আশপাশে কয়েকটি জেলায় কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ৪ মের পর দেখা গেল, ওই জায়গায় আর সংকুলান হচ্ছে না। এ কারণে বিভাগের বাকি জেলাগুলোতেও কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁরা ভারত থেকে আসছেন, তাঁরা নিজ খরচে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, এমন মুচলেকা দিয়েই দেশে ফিরছেন। দেশে ফেরার পর অনেকে কোয়ারেন্টিনে যেতে অনীহা প্রকাশ করলেও বড় কোনো সমস্যা হয়নি। কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে থাকা–খাওয়ার খরচ বহন করা হচ্ছে।