খুলনায় সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের লাঠিপেটা

খুলনায় বিএনপি ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ইট–পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের কে ডি ঘোষ সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনায় পুলিশ–ছাত্রলীগ ও বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এতে ছাত্রলীগ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন বলে দুই পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সোয়া ছয়টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এরপর বৃষ্টি এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সংঘর্ষ শেষে পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করে নেতা–কর্মীদের লাঠিপেটা করে। সেখান থেকে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলমসহ ৩৭ নেতা–কর্মীকে আটক করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ১৫০টি শর্টগানের গুলি ছুড়েছে পুলিশ।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বিকেলে খুলনা নগরের কেডি ঘোষ সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কটূক্তির প্রতিবাদে ডাকা এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিল খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগ।

সংঘর্ষ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য পাওয়া গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা অতর্কিতে তাঁদের সমাবেশে হামলা চালায়। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত নেতা–কর্মী আহত হন। পরে পুলিশ বিএনপি কার্যালয় ও আশপাশ থেকে ৩৭ জন নেতা–কর্মীকে আটক করে।

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা করেছে বিএনপি ও ছাত্রদল। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় ছাত্রলীগের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পিকচার প্যালেস মোড় দিয়ে বিএনপির সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় সড়কে থাকা পুলিশ তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে বিএনপির নেতা–কর্মীরা সমাবেশ ছেড়ে ছাত্রলীগের ওপর হামলা করতে আসে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পরে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালান এবং পুলিশ গিয়ে তাঁদের লাঠিপেটা করে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সংঘর্ষে কিছুটা শান্ত হলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ ভাঙা চেয়ার পড়ে আছে। সমাবেশস্থলের মঞ্চ ভেঙে ফেলা হয়েছে। কার্যালয়ের মধ্য থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীদের আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

সংঘর্ষের সময় সাংবাদিকদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনের চেয়ার ভাঙচুর করছেন। বেশ কিছুক্ষণ চেয়ার ভাঙার পর পুলিশ ছাত্রলীগের কর্মীদের সরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তালা ভেঙে বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করে।

সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালান এবং স্টেজ ও চেয়ার ভাংচুর করেন

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম বলেন, ‘পুলিশ-ছাত্রলীগ এক হয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করেছে। তারা নির্বিচার সমাবেশের চেয়ার, মঞ্চ ভাঙচুর করেছে। অন্তত ৫০ নেতা–কর্মীকে জখম করেছে। এরপর তালা ভেঙে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে নেতা–কর্মীদের পিটিয়েছে। কার্যালয়ের ভেতর থেকে বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক রেহেনা ঈসাসহ ৩৭ জনকে আটক করেছে।’

অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মিছিলটি পিকচার প্যালেস মোড় অতিক্রমের সময় বিনা উসকানিতে বিএনপির পক্ষ থেকে হামলা চালানো হয়। তাদের হামলায় ছাত্রলীগের অন্তত ১২ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ কোনো ভাঙচুর করেনি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে চেয়ার-স্টেজ ভাঙচুর করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।’

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, বিকেলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশ চলছিল। আর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের সমাবেশ ছিল। পিকচার প্যালেস মোড়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মিছিল মুখোমুখি হয়। ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ছাত্রলীগের মিছিলে ইটপাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়।

ওসি হাসান আল মামুন আরও বলেন, সংঘর্ষে ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং পূর্বাঞ্চলের এম এ হাসান, দীপ্ত টিভির মাহাবুব, এখন টিভির হেলালসহ মোট ৩ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ১৫০টি শর্টগানের গুলি ছোড়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।