খুলনায় প্রতিবন্ধীদের দুয়ারে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান

মেলায় শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারের পাশের মাঠের দুই পাশে সাজানো স্থানীয় বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের স্টল। প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের সেবা দেয়, সে সম্পর্কিত প্রচারপত্রও রাখা হয়েছে স্টলের সামনে। প্রতিটি স্টলের সামনের টেবিলের ওপর একটি বাক্স রাখা আছে। ওই বাক্সে লেখা ‘এখানে সিভি জমা দিন’।

সেখানে চাকরির সন্ধানে তরুণ-তরুণীরা আসছেন। তাঁরা আগ্রহ নিয়ে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন। তবে চাকরির সন্ধানে আসা সবাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা প্রতিবন্ধী।

আজ সোমবার খুলনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যতিক্রমী এ চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়। খুলনার ২৪টি বড় প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করে। অ্যাকশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এডিডি) ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এ মেলার আয়োজন করে। মেলায় শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

এ বছর এইচএসসি পাস করেছেন শান্তা মনি। স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন তিনি। শান্তার বাঁ পা ও বাঁ হাতের কবজি নেই। শরীরও অপেক্ষাকৃত ছোট। শান্তা জানান, তাঁর সমস্যা জন্মগত। এভাবেই তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ভ্যানচালক বাবার পক্ষে পরিবারের খরচ বহনের পর তাঁর পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নিজের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারকে সহায়তা করতে চাকরি খুঁজছেন তিনি।

শান্তা মনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাধারণত কেউ চাকরি দিতে চায় না। এমন পরিস্থিতিতে খুলনার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেওয়ার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা নিচ্ছেন। এটা খুব ভালো খবর। এই মেলার মাধ্যমে অনেকেই হয়তো চাকরির সুযোগ পাবেন।

মেলার প্যাভিলিয়নের বাইরের একটি বেঞ্চে নিজেদের জীবনবৃত্তান্তে ছবি যুক্ত করছিলেন মো. আজমির হোসেন ও বিল্লাল হোসেন। আজমির খুলনা আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আর বিল্লাল হোসেন সরকারি বিএল কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করেছেন। আজমিরের ডান হাতের কবজি ও ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে নেই। বিল্লালের ডান হাতের একটি অংশ নেই।
আজমির বলেন, ‘একটা চাকরি হলে অন্তত নিজে ভালোভাবে চলতে পারব। পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারব। ’

ওই মেলায় খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের স্টল ছিল। স্টলে দায়িত্বরত সজীব আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হচ্ছে। এরপর সেটি বাছাই করে পদ খালি থাকা সাপেক্ষে চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

এর আগে আজ সকালে সিএসএস আভা সেন্টারের সম্মেলনকক্ষে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মফিজুর রহমান, খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির পরিচালক মো. মফিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) খুলনা বিভাগীয় প্রধান শামীমা সুলতানা। অনুষ্ঠানে এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. শফিকুল ইসলাম, আইডব্লিউ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রাকিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এ ধরনের চাকরির মেলা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সামনে এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করবে। আবার এই মেলার মাধ্যমে যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরি পাবেন, তাঁদের দেখে অন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উৎসাহিত হবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাতজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইলচেয়ার, এলবো ক্র্যাচ, সাধারণ ক্র্যাচ ও শ্রবণযন্ত্র বিতরণ করা হয়।