খুলনার কিশোরী লামিয়ার (১৪) গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারের করা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার চার তরুণের রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁদের দুই দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চার তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তা নামঞ্জুর করে সাত দিনের মধ্যে দুই দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঠিকাদার ইউসুফ আলীর করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত শুক্রবার ঠিকাদারির একটি কাজ নিয়ে ওই চারজন তাঁর বাড়িতে এসে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তখন তিনি তাঁদের চাঁদার টাকা দেবেন বলে ঘরের ভেতর গিয়ে পিস্তল আনেন। পিস্তল দেখে ওই চারজন দৌড় দেন। তখন ঠিকাদার দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। সেই গুলির একটি লামিয়ার পায়ে লাগে।
ঘটনার পরের দিন নগরের পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার ঠিকাদার ইউসুফ আলী শনিবার খুলনা সদর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলাটি করেন। এই চারজন হলেন যশোরের কেশবপুরের হদ গ্রামের মোহাম্মদ আবু সাঈদ (২২), বাগেরহাটের রামপালের বাড়ৈপাড়া গ্রামের মো. ইসমাইল মল্লিক (২৭), খুলনার কয়রার গোগড়া গ্রামের মো. মেহেদী হাসান (২১) ও খুলনার দৌলতপুরের পাবলা এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম (২৩)। রোববার পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। তবে তরুণদের স্বজনের দাবি, ঠিকাদার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করেছেন।
আসামি সাইফুলের মামা মো. সোহেল অভিযোগ করেন, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ের সঙ্গে গ্রেপ্তার একজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই ছেলে কয়েক দিন ধরে ফোন দিয়ে মেয়ের নম্বরটি বন্ধ পান। তিনি জানতে পারেন, মেয়েটিকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন ঠিকাদার। এ অবস্থায় তিন বন্ধুকে নিয়ে তিনি ঠিকাদারের বাড়িতে যান। এ সময় উত্তেজিত হয়ে ঠিকাদার ইউসুফ আলী প্রথমে তাঁদের গালিগালাজ করেন এবং পরে পিস্তল দিয়ে তাড়া দেন।
কিশোরী লামিয়া এখন ওয়ার্ডে
গুলিতে আহত সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়াকে আজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার–পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষ থেকে সার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লামিয়ার পা থেকে গুলি বের করেন চিকিৎসকেরা। বিদ্ধ হওয়া গুলিটি হাড়ের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল।
লামিয়ার মামা তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে লামিয়াকে বেডে দেওয়া হয়েছে। সে এখন কিছুটা সুস্থ আছে। তবে এখনো স্পষ্ট করে কথা বলতে পারছে না। কথায় জড়তা রয়েছে। গায়েও ভীষণ ব্যথা আছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
খুলনা আওয়ামী লীগের বিবৃতি
খুলনা নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দোষীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের ব্যর্থতার কারণে নগরের মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় গুলি ছুড়ে এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত করেছেন একজন ঠিকাদার, যার সঠিক রহস্য উদ্ঘাটন অত্যন্ত জরুরি। তিনি যত বড় ক্ষমতাবানই হোন না কেন, গুলির ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
কারোর মিথ্যাচারে কোনো নিরপরাধ মানুষ যাতে বিপথে না পড়ে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান নেতারা।
বিবৃতি দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা হলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং খুলনা ৩ আসনের সাংসদ বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দীন জুয়েল, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী প্রমুখ।