মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগার খাসিয়াপুঞ্জি (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসতি) থেকে দুটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কাটার জন্য আরও কিছু গাছ লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে জীবিকা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় পুঞ্জির লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পুঞ্জির কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আগারপুঞ্জিটির পাশ ঘেঁষে ছোটলেখা চা-বাগান পড়েছে। পুঞ্জিতে ৪৮টি খাসিয়া পরিবারের বাস। পান চাষ ও বিক্রি করে করে তাঁদের জীবিকা চলে। ১৯ মার্চ বাগানের ২০-২৫ জন লোক পুঞ্জিতে ঢোকেন। একপর্যায়ে তাঁরা পুঞ্জির পানবাগানের ভেতর একেক করে চাপালিশ প্রজাতির বড় আকারের গাছগুলোর গায়ে লাল কালি দিয়ে নম্বর লিখে চিহ্নিত করতে থাকেন। এ সময় কিছু লোক করাত ও কুড়াল দিয়ে দুটি গাছ কেটে ফেলেন। খবর পেয়ে পুঞ্জির লোকজন গিয়ে বাধা দিলে কাটা গাছ ফেলে তাঁরা চলে যান।
আজ রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পানবাগানের সামনে ছোটলেখা-বোবারথল কাঁচা রাস্তার পাশে কাটা দুটি গাছের কয়েকটি খণ্ড ফেলে রাখা। বাগানের ভেতরে অন্তত ২৫টি গাছে নম্বর লিখে চিহ্নিত করা। বাগানে চাপালিশসহ জাম, কাঁঠাল, আওয়াল, গুঁতগুঁতি, হরীতকী, বহেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রচুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ বেয়ে পানগাছগুলো লতিয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বোবারথল গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া ৩০-৩৫ বছর ধরে পুঞ্জির বাগানে পাহারাদারের কাজ করছেন। তিনি বললেন, সেদিন তাঁর সামনেই চা-বাগান কর্তৃপক্ষের লোকজন পানবাগানে ঢোকেন। কিছু লোক গাছ চিহ্নিত করছিলেন। আর অন্যরা দুটি গাছ কাটা শুরু করেন। এরপর তিনি পুঞ্জির লোকজনকে খবর দেন।
পুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) সুখমন আমসে বলেন, ‘আমরা গাছকে সন্তানের মতো ভালোবাসি। গাছের যত্ন নিই, পরিচর্যা করি। অথচ চা-বাগান কর্তৃপক্ষ গাছ কেটে নিতে চায়। গাছ কেটে নিলে পান চাষ হবে না। জীবিকা বন্ধ হয়ে পড়বে। আমরা খুব ভয়ে আছি। যে দুটি গাছ কাটা হয়েছে, সেগুলোর বয়স ৩০-৪০ বছর হবে। আমরা এ বিষয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।’
আজ দুপুরে ছোটলেখা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শাকিল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পুঞ্জির জমি খাসিয়াদের বহু আগে বর্গা দেওয়া হয়েছে। বাগানের শ্রমিকদের বাড়িঘর মেরামতের জন্য কিছু কাঠের প্রয়োজন ছিল। তাই গাছ কাটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরে মৌলভীবাজার-১ আসনের সাংসদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গাছ কাটায় আপত্তি করেন। এরপর আর গাছ কাটা হয়নি। দুটি গাছ কে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন অথবা সরকারি জমি থেকে গাছ কাটার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। এরপর তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারি জমির গাছ কাটতে হলে সরকারকে রাজস্ব প্রদান করতে হয়।
আগারপুঞ্জিতে কাছ কাটার নিয়ম মানা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ব্যবস্থাপক শাকিল আলম বলেন, মন্ত্রীর সাড়া না পাওয়ায় তাঁরা আর এ বিষয়ে এগোননি।
বেলা দুইটার দিকে বড়লেখার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান মুঠোফোনে বলেন, পুঞ্জিতে গাছ কাটা বা চিহ্নিত করার বিষয়ে এখনো তাঁর কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।