খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। তাই খালাস পাওয়া চারজনের বিষয়ে কথা হয় তাঁদের আইনজীবীর সঙ্গে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোন কোন অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, সে সম্পর্কে তাঁদের আইনজীবী প্রথম আলোকে বেশ কিছু তথ্য দেন।

খালাস পাওয়া চারজন হলেন মো. মুসা, রাফিউল ইসলাম, কামরুল ইসলাম সাইমুন ও মো. সাগর। তাঁদের মধ্যে মুসা ঘটনার পর থেকেই পলাতক। এই চার আসামির আইনজীবী ছিলেন বরগুনা জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. শাহজাহান।

কামরুল ইসলাম সাইমুন

কামরুল ইসলাম সাইমুন
সাইমুনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছিল, ২৬ জুন ঘটনার দিন রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কোপানোর পর মামলার প্রধান আসামি রিফাত ফরাজী তাঁকে (সাইমুন) ফোন দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে কলেজের সামনে যেতে বলেন। সাইমুন সেই মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যান এবং রিফাত ফরাজীকে চাবি ও মোটরসাইকেল দিয়ে আসেন। সেই মোটরসাইকেলে রিফাত ফরাজী, তাঁর ছোট ভাই রিশান ফরাজী ও নয়ন বন্ড পালিয়ে যান।

প্রকৃতপক্ষে এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর কেউ এ ঘটনার সপক্ষে সাক্ষ্য দেননি। আর এ–সংক্রান্ত কোনো মোটরসাইকেল এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করতে পারেনি। পাশাপাশি সাইমুন যে মোটরসাইকেল চালাতে পারেন, তাঁর যে মোটরসাইকেল ছিল, এমন কোনো মালিকানা ও চালক সনদও আদালতে দিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

এ ছাড়া সাইমুনকে রিফাত ফরাজী ফোন করে মোটরসাইকেল চেয়েছিলেন বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, আসলে (ওই সময়ে ৭ সেকেন্ডের যে ফোনকল) তা ছিল সাইমুনের বাবার। এ বিষয়গুলো রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।

সাগর

মো. সাগর
সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, কেউ একজন ঘটনার দিন সকাল ৯টায় বরগুনা সরকারি কলেজে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। ওই স্ট্যাটাসে সাগর ইমোজি দিয়ে লাইক দিয়েছিলেন। শুধু ইমোজি দিয়ে লাইক দেওয়ার কারণে সাগরকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাস্থলে সাগরের কোনো ভূমিকা কিংবা কলেজে যাওয়া কিংবা ভিডিওতে দেখা যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।

রাফিউল ইসলাম

রাফিউল ইসলাম
রাফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ঘটনার দিন রাতে তাঁর এক বন্ধু (মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত) এসে তাঁর বাসায় থাকতে চান এবং বলেন একটু ঝামেলা হয়েছে, সে জন্য তিনি তাঁদের বাসায় থাকতে চান। রাফিউল তখনো রিফাতকে কোপানোর ঘটনাটি জানতেন না। কিন্তু রাতে যখন ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়, তখন ওই আশ্রিত বন্ধু তাঁদের বাসা থেকে চলে যান। কিন্তু রাফিউলের ওই বন্ধুকে আশ্রয় দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

মো. মুসা

পলাতক মুসা
মুসার বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। কিন্তু ঘটনার ভিডিওতে মুসার সেখানে উপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণও করতে পারেনি। ফলে মুসাও এ মামলায় খালাস পান।
এই আইনজীবী বলেন, এ মামলায় খালাস পাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। কেবল সাইমুন পুলিশের তদন্তে এই মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।

২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী আয়শার সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেদিন বিকেলে তিনি মারা যান। পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয় আয়শাকে। পরে অভিযোগপত্রে ৭ নম্বর আসামি হিসেবে নাম আসে তাঁর। গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে ৭৬ জন সাক্ষ্য দেন।
গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য পাঁচ আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)। আর খালাস পাওয়া চারজনের মধ্যে পলাতক মুসা ছাড়া বাকি তিনজনকে রাতেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।