এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এ জন্য সরানো হচ্ছে গ্যাস লাইনের পাইপ। সড়কের এক পাশে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়ক। আবার সড়কের যেটুকু অংশ আছে, সেটিও খানাখন্দে ভরা। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে গাড়ি চলাচল, যানজটে দুর্ভোগ বাড়ছে যাত্রীদের।
দুর্ভোগের এই চিত্র চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট মোড়ের। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের কারণে ভোগান্তি শুধু এই মোড়েই সীমাবদ্ধ নেই, তা ছড়িয়েছে পুরো শেখ মুজিব সড়কে। গত বুধ ও গতকাল শুক্রবার সরেজমিন এই চিত্র দেখা গেছে। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্যাস লাইনের কাজ শেষ হলে পানির লাইনের কাজ শুরু হবে। এ কারণে দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ছোট–বড় ৫৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ প্রকল্প এলাকার মধ্যে রয়েছে নগরের দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক। এ সড়কের বেহাল দীর্ঘদিন ধরে।
সড়ক সংস্কার করতে সিডিএকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এরপর এই দুর্ভোগ নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো প্রতিফলন নেই। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে শেখ মুজিব সড়কের ফুটপাত থেকে নালায় পড়ে মৃত্যু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে ফুটপাত সংস্কার করা হলেও তাতে কোনো নিরাপত্তা নির্দেশনামূলক ব্যবস্থা ছিল না। এ দুর্ঘটনার পর সড়ক সংস্কার ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি উঠলেও কোনো পদক্ষেপ এখনো চোখে পড়েনি।
নগরের দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কে বৃষ্টি হলেই কাদাপানি জমে যায়। রাস্তা হয়ে পড়ে পিচ্ছিল। তখন দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকেন গাড়িচালকেরা। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এসেও ভোগান্তি কমছে না নগরবাসীর। খানাখন্দে ভরা সড়কে ধুলাবালুর জন্য চলা দায় হয়ে পড়েছে যাত্রী ও পথচারীদের। স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানিদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই।
সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের পাইপলাইন স্থানান্তরের কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে হয়। কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডসহ বিভিন্ন সংস্থা দফায় দফায় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছে। তাই সময় লাগছে। তবে আগামী সোমবারের মধ্যে এই কাজ শেষ হতে পারে।
কিন্তু গ্যাস লাইনের কাজ শেষ হলেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। এরপর শুরু হবে পানির পাইপ লাইন স্থানান্তরের কাজ। আগামী মঙ্গলবার থেকে এই কাজ শুরুর কথা রয়েছে। তবে এতে বেশি সময় লাগবে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান।
দেওয়ানহাট মোড়ে পাইপলাইন স্থানান্তরের কাজের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। সলিম উল্লাহ তাঁদের একজন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জন্য দেওয়ানহাট মোড় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে পাইপ বসানোর জন্য রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কখনো কাজ হয়, কখনো হয় না। কাজের ধীরগতির কারণে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকতে হচ্ছে।
নগরের আগ্রাবাদে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাবিব রহমান। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে সড়কটি অনেক দিন ধরে বেহাল। সড়কে ছোট–বড় গর্ত হয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গর্তগুলোতে পানি জমেছে। রাস্তাও কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় মোটরসাইকেল চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কবে যে দুর্ভোগের অবসান হবে, কেউ জানে না।
জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণকাজ চলাচলে যাতে জনভোগান্তি কম হয়, সেটি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির মধ্যেই থাকে। কিন্তু এসব তদারকি করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে সড়কগুলো বেহাল হয়ে জনভোগান্তি চরমে উঠেছিল। এখন শুষ্ক মৌসুম। সংস্কারকাজের জন্য একেবারে সময়োপযোগী সময়। তাই সিডিএর উচিত হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করা।