দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামে ইছামতী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কাজও শুরু হয়েছিল। কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে।
ঠিকাদারের অবহেলায় দীর্ঘ সময়েও সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সেতুর স্থলে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছেন গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন। আজ বুধবার দুপুরে সাঁকো দিয়ে চলাচল শুরু করেছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের শুরুতে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু করেন স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এম এহতেশামুল হক। পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬ টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেতুর দুই পারে গোয়ালডিহি, নলবাড়ী, ডুমুলিয়া, পূর্ব হাসেমপুর, পশ্চিম হাসেমপুর গ্রামে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এই রাস্তা ব্যবহার করেন উত্তরা ইপিজেডের কর্মী, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সেবাগ্রহীতারা। প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কৃষকেরা তাঁদের পণ্য নিয়ে খানসামাসহ নীলফামারী বাজারে যান এই রাস্তা দিয়ে। বর্ষার সময় শিশুদের স্কুলে যাতায়াতসহ সবার ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।
গোয়ালডিহি গ্রামের বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘গত চার বছরেও সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এত দিন ধরে ভোগান্তি হলো বাজেট বরাদ্দ নেই দেখে। বাজেট যখন এল, তখন ঠিকাদারের অবহেলা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। সামনে বর্ষা শুরু হচ্ছে। তা–ও ভালো যে চেয়ারম্যান একটা সাঁকো বানিয়ে দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থাটা করে দিলেন।’
গোয়ালডিহি ইউপির চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণে দেরি হওয়ায় এলাকার লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রতিদিন মানুষের অভিযোগ শুনতে হয়। পরে টিআর প্রকল্পের আওতায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭৫ ফুট লম্বা কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন। তবে সেতুটির কাজ যেন তরান্বিত হয়, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনিও দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রাখছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয়ের উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলে কালক্ষেপণ করছেন। তিনি বলেন, এত দিনে শুধু পাইলিংয়ের কাজ শেষ করেছেন। এ জন্য ৩০ শতাংশ টাকাও উত্তোলন করেছেন। শুধু এই সেতুই নয়, পার্শ্ববর্তী চিরিরবন্দর উপজেলাতেও তিনি একইভাবে কাজ নিয়ে ফেলে রেখেছেন। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অন্যথায় তাঁর কার্যাদেশ বাতিল করার কথাও জানানো হয়েছে।