খানজাহানের মাজারের দিঘির পুরুষ কুমিরটি অসুস্থ, চিকিৎসা শুরু

খানজাহান (রহ.)–এর মাজারের দিঘি থেকে তোলার পর কুমিরটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে
প্রথম আলো

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক খানজাহান (রহ.)–এর মাজারের দিঘির দুটি কুমিরের মধ্যে পুরুষ কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ১১ জুন কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়। আঘাতজনিত কারণে এটির ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁ চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলছেন চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আজ বুধবার দুপুরে দিঘি থেকে পূর্ব পাশের শানবাঁধানো ঘাটে তোলা হয় কুমিরটিকে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ মিলে কুমিরটিকে চিকিৎসা দিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জামাল ফকির বলেন, ‘কুমিরটি প্রায় এক মাস ধরে অসুস্থ। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আমরা কয়েকজন মিলে খুব সতর্কভাবে কুমিরটিকে দড়ি দিয়ে পাড়ে তুলেছি।’ মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে কুমিরটি অসুস্থ। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আজ কুমিরটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আশা করি, কুমিরটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।’

অসুস্থ কুমিরটির বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছর। দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট, ওজন প্রায় ৯০০ কেজি। কুমিরটি তুলনামূলকভাবে অনেক মোটা (ফ্যাটি) এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে প্রাণিসম্পদ ও সুন্দরবন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানান। কুমিরটিকে দিঘির উত্তর পাড়ে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অসুস্থ কুমিরটির বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছর। দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট, ওজন প্রায় ৯০০ কেজি। কুমিরটি তুলনামূলকভাবে অনেক মোটা (ফ্যাটি) এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর বলেন, কুমিরটিকে ওপরে ওঠানোর পরে তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন। কুমিরটির চোয়ালে যে ক্ষত ছিল, সেটি এখন নেই। তবে কুমিরটি একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখেও ঝাপসা দেখছে। তাই জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে ১০ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কুমিরটির ওজন অনেক বেড়ে গেছে। অপ্রয়োজনীয় চর্বি কমানোর জন্য কুমিরটিকে এখন থেকে পরিমিত খাবার দেওয়া প্রয়োজন।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘কুমিরটির ডান চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট আর বাঁ চোখ খুলছে না। দীর্ঘদিন ধরে খাবার না খাওয়ার কারণে কুমিরটি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ওপরে তোলার পর কুমিরটিকে আমরা তাৎক্ষণিক কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছি। আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।’

খানজাহানের মাজারের ঐতিহ্য ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামের কুমির নিয়ে স্থানীয় মানুষের মুখে অনেক কিংবদন্তি ও লোককাহিনি শোনা যায়। দিঘির পুরুষ কুমিরগুলোকে ‘কালাপাহাড়’ এবং নারী কুমিরগুলোকে ‘ধলাপাহাড়’ বলে লোকে। এগুলো হয়ে ওঠে খানজাহানের মাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইউনেসকো–ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদসহ তৎকালীন (প্রাচীন) খলিফাতাবাদ নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হজরত খানজাহান (রহ.) তাঁর জীবদ্দশায় দিঘিটি খনন করে এখানে কুমির অবমুক্ত করেন বলে জনশ্রুতি আছে। তিনি নিজ হাতে কুমিরগুলোকে খাবার দিতেন। ২০১৫ সালে এগুলোর সর্বশেষ বংশধর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তার আগে ২০০৫ সালে দিঘিতে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে আনা ছয়টি কুমির ছাড়া হয়। বর্তমানে এখানে মাদ্রাজের একটি পুরুষ ও একটি নারী কুমির আছে। এই কুমির দুটিই এখন দর্শনার্থীর উৎসুক চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে আসছে।