কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), এপিবিএন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও জেলা পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করছে। আকাশে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি রাখা হবে। আজ মঙ্গলবার চাঁদ দেখা গেলে কাল বুধবার দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে।
ঈদের দিন মাঠের ভেতর-বাইরে থাকবে ৬৪টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। পুরো মাঠ নজরদারির জন্য থাকবে দুটি ড্রোন। আটটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মুসল্লিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠ ও আশপাশে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি ও এপিবিএন মোতায়েনসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পুরো মাঠ ও আশপাশকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে, যাতে দূরদূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন।
নিরাপত্তার খাতিরে ঈদের দিন পর্যন্ত এলাকার কোনো বাসায় নতুন কাউকে ভাড়া না দিতে বাড়িওয়ালাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। নতুন কোনো মানুষ এলাকায় এলে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঈদের দিন মাঠের চারদিকের সব কটি প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়ে মাঠের দক্ষিণ দিকে তিনটি, পূর্ব দিকে তিনটি ও উত্তর পাশে একটি প্রবেশপথের আর্চওয়ে দিয়ে প্রত্যেক মুসল্লিকে ঢুকতে দেওয়া হবে। একটি পথ গাড়ি প্রবেশের জন্য রাখা হবে। এ ছাড়া মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ এফতেখার উদ্দিন জানান, শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় অন্যান্য বাহিনীর মতো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে র্যাব। ঈদের জামাতকে নির্বিঘ্ন করতে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের শতাধিক সদস্য সক্রিয় থাকবেন। এবারই প্রথমবারের মতো র্যাবের নিরাপত্তাবহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হামলার কারণে একধরনের শঙ্কা থেকেই এবার শোলাকিয়ায় স্মরণকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাঠের ভেতর-বাইরে ইউনিফরম ও সাদাপোশাকে বিপুল পরিমাণ পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করবে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক দল। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। শুধু পাতলা জায়নামাজ নিয়ে আসতে পারবেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী গতকাল রোববার শোলাকিয়া মাঠ পরিদর্শন শেষে বলেন, মুসল্লিদের বাড়তি নিরাপত্তায় প্রশাসন থেকে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়া মাঠের পাশে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার কারণে নিরাপত্তা জোরদারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী এ ঈদগাহ মাঠে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরতে পারবেন লাখো মুসল্লি।
এবার শোলাকিয়ায় ১৯২তম ঈদুল ফিতরের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। বন্দুকের গুলির আওয়াজের মাধ্যমে কাল সকাল ১০টায় ঈদের জামাত শুরু হবে। মুসল্লিদের আসা-যাওয়ার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতি ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশ থেকে তিন লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম হয় এ মাঠে। ১৮২৮ সালে এ মাঠে প্রথম বড় জামাতে একসঙ্গে সোয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই সোয়া লাখ থেকে ঈদগাহ মাঠের নামকরণ হয় শোলাকিয়া। প্রতিবছর দেশ–বিদেশের তিন থেকে চার লাখ মুসল্লি এ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ শুরুর আগ মুহূর্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের তল্লাশির সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা করে। এ ছাড়া তাদের চাপাতির কোপে দুই পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক মারা যান। এ সময় আরও ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে সন্দেহভাজন জঙ্গি আবির রহমান মারা যান। দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক। আটক করা হয় আরেক সন্দেহভাজন জঙ্গি শফিউলকে। পরে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ডাংরি এলাকায় র্যাবের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শফিউল নিহত হন।