ঢাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার পথে পুলিশের কড়াকড়ি শিথিল করার পর গতকাল শুক্রবার থেকে ঈদের ছুটিতে আবারও ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। এর আগে ঢাকা ছাড়া ও ঢাকায় ঢোকার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল পুলিশ। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া অনেক লোককে ফেরতও আনা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যাঁরা ঈদে বাড়িতে যেতে চান, পুলিশ যেন তাঁদের চলাচলে বাধা না দেয়। তাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
১৭ মে জরুরি প্রয়োজন ছাড় কেউ যাতে ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে না পারেন, সে বিষয়ে নিরাপত্তাচৌকি জোরদার করতে নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। নির্দেশনা পেয়ে ওই দিন দুপুর থেকে পুলিশ কড়াকড়ি আরোপ করে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ঈদে যাতে নিজ অবস্থান ছেড়ে কেউ গ্রামের বাড়ি না যেতে পারেন, সে ব্যাপারে বিভিন্ন জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এরপর বৃহস্পতিবার বলা হয়, গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, তবে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কেউ চাইলে যেতে পারবেন। বৃহস্পতিবার পুলিশের এই ঘোষণার পর থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নামে সড়কে।
গতকাল বিকেলে ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতির মধ্যেই কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই মানুষ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছেন।
>ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ দেওয়ার পর দলে দলে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। সড়কের পাহারা সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ।
গাবতলীতে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানালেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বসানো নিরাপত্তাচৌকিকে (চেকপোস্ট) কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিকেল চারটার দিকে গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দেখা যায়, বাড়ি ফেরা মানুষের জটলা। তাদের হাতে ও কাঁধে ব্যাগ। জটলা ঘিরেই রয়েছে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোররিকশা ও মোটরসাইকেল। ঘরে ফেরা মানুষগুলো গন্তব্যে যেতে গাড়িচালকদের সঙ্গে দরদাম করছেন। কিছু প্রাইভেট কারের চালক ‘ঘাটপার’ ‘ঘাটপার’ (মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট) বলে যাত্রীদের ডাকছেন।
গতকাল রাজধানীর শনির আখড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম স্ত্রী, সন্তান ও ভাই নিয়ে এসেছেন গাবতলীতে। তাঁরা যাবেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর গ্রামের বাড়িতে। নজরুলের ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুনে এসেছেন বাড়িতে যাওয়া যাবে। তাই প্রাইভেট কার ভাড়া করে বাড়ি যাচ্ছেন।
আরেকজন বরুণ বিশ্বাস। ঢাকার বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মচারী। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তিনি জানালেন, তাঁর ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। স্ত্রী ও সন্তান বাড়িতে আছেন। গত তিন মাসে তাদের দেখতে যেতে পারেননি। সুযোগ হয়েছে তাই বাড়িতে যাচ্ছেন। চারজন মিলে তাঁরা সিরাজগঞ্জ যেতে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করেছেন।
ঢাকায় ঢাকা ও বের হওয়ার পথে এক দিন আগেও আমিন বাজার সেতুর আগে নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে মানুষ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করছিল পুলিশ। গতকাল সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি।
গাবতলীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক সর্জেন্ট মামুন-উর-রশীদ বলেন, গত বুধবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর নিরাপত্তাচৌকি থেকে পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে তারা এখন খেয়াল রাখছেন ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া গণপরিবহন যাতে যাত্রী বহন করতে না পারে।
ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাঁরা বাড়ি যেতে চান, তাঁরা বাড়ি যেতে পারবেন। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
গতকাল র্যাবের সদর দপ্তর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যে কেউ গ্রামের বাড়িতে যেতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনকল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।