ক্রেতার ভিড়ে নেই স্বাস্থ্যবিধি

প্রতি কেজি চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

খুলনা নগরের বয়রা মদিনা মসজিদ সড়কে গতকাল ক্রেতাদের ভিড়।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে খুলনা শহরের ১০টি স্থানে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার পণ্য বিক্রির প্রথম দিনেই ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির এ সময়ে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে চরম উদাসীনতা দেখা গেছে। গাদাগাদি লাইনে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষ পণ্য কিনেছেন।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খুলনা কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতি কেজি চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ১০টি ট্রাকের প্রতিটিতে প্রতিদিন ৫০০ কেজি চিনি, ৪০০ কেজি ডাল ও ৮০০ লিটার তেল দেওয়া হচ্ছে। টিসিবির নেওয়া এ কর্মসূচি ঈদের ছুটি ছাড়া চলবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সাড়ে ৯টা-১০টার মধ্যে বিক্রি শুরু হয়ে পণ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি চলবে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও চার লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন।

গতকাল নগরের গল্লামারী, এমএ বারী সড়ক, নিরালার মোড়, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল, জাতিসংঘ শিশুপার্ক, সোনাডাঙ্গা মদিনা মসজিদ, দৌলতপুর শহীদ মিনার, শিরোমনি বাজার ও খালিশপুর লাল হাসপাতাল মোড় এলাকায় পণ্য বিক্রি হয়েছে। তবে একই স্থানে প্রতিদিন বিক্রি করা হলে অন্য এলাকার মানুষ এ সুবিধা পাবে না, এ কথা মাথায় রেখে এর বাইরে আরও ৩০টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০টি ট্রাকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ঘুরে ঘুরে সব স্থানে পণ্য বিক্রি করা হবে। আর খুলনা নগর ছাড়াও আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর—এই ৫ জেলার ৩৬টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ২০টি স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি হবে।

গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বয়রা এলাকার মদিনা মসজিদ–সংলগ্ন টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে দীর্ঘ সারি। ডিলারের একজন কর্মী হ্যান্ডমাইকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। ট্রাকের সামনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য সাইকেলের টায়ারও ছিল। তবে সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়ে কারও কোনো লক্ষ্য ছিল না। একজন আরেকজনের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। আবার অনেকের মাস্ক থাকলেও তা জায়গামতো ছিল না। যিনি পণ্য মাপছিলেন, তাঁর মুখেও মাস্ক ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্যবয়সী এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম আগুন। এর মধ্যে যদি একটু কম দামে দুটি পণ্য কেনা যায়, তাতেই অনেক কিছু। তবে যে দীর্ঘ লাইন আর নিয়মকানুনের যা অবস্থা, তাতে কতটুকু কী হয়, বলা মুশকিল।’

মাস্ক পরে থাকা সাকিয়া বেগম নামের একজন নারী বলেন, ‘কেউ তো কারও কথা শুনছে না। গায়ে গা মিশিয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর দেখেছেন, বেশির ভাগ লোকের কাছে মাস্ক আছে, কিন্তু পরেনি। আমাদের মতো লোকের কত রকম জ্বালা। কপালে যা আছে, তা–ই হবে। মালামালও তো দরকার।’

টিসিবি খুলনার আঞ্চলিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না। স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, প্রতিটি ট্রাকের সামনে টায়ার ব্যবহার করতে হবে, হাতমাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিতে হবে এবং ক্রেতাদের অবশ্যই মাস্ক পরে লাইনে দাঁড়াতে হবে। বিক্রেতাদেরও মাস্ক পরতে হবে। এসব বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা হবে।