মাদারীপুরে ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুব রহমান ও কনস্টেবল সোহাগকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে দুজনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ওই দুই পুলিশ সদস্যসহ শিবচরের সূর্যনগর এলাকার টুম্পা টেলিকম অ্যান্ড মোবাইল কর্নারের স্বত্বাধিকারী টোকন ব্যাপারীকে আসামি করে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুর রহমানের আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন সুজন শেখ নামের এক ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত ওই এএসআই মামলার বাদী সুজন শেখকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে চাঁদার ১ লাখ টাকা ফেরত দেন। এরপরই পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ঘটনায় শনিবার প্রথম আলোয় ‘“ক্রসফায়ারের” ভয় দেখিয়ে নেওয়া লাখ টাকা ফেরত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ভুক্তভোগী সুজন শেখ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাড়ইডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন মুদিদোকানি ও বিকাশ এজেন্ট। মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করে মোটরসাইকেলে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন সুজন। মাঝপথে মাদারীপুরের শিবচরের সূর্যনগর এলাকায় পৌঁছালে সুজনের মোটরসাইকেল থামিয়ে সাদাপোশাকে থাকা দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মাহাবুব ও কনস্টেবল সোহাগ কাগজপত্র দেখতে চান। সুজন কাগজপত্র দেখালে তা সঠিক নয় উল্লেখ করে ওই দুই পুলিশ সদস্য এটি চোরাই মোটরসাইকেল বলে দাবি করেন। পরে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তাঁরা। সুজন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখান তাঁরা। পরে সুজনের সঙ্গে থাকা মুঠোফোনের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে পাশের টোকন ব্যাপারীর দোকানের মাধ্যমে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা তুলে নেন ওই দুজন পুলিশ সদস্য। এ ঘটনা কাউকে না বলার শর্ত দিয়ে সুজনকে ছেড়ে দেন তাঁরা।
এ ঘটনার এক দিন পরে বুধবার শিবচর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ কোনো পরামর্শ না দিয়ে সুজনকে চলে যেতে বলেন। এরপর সুজন শেখ বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুর রহমানের আদালতে মামলা করেন। শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। ২৫ মার্চ মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
শনিবার বেলা আড়াইটায় জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই যুবক (সুজন শেখ) যদি আমাদের কাছে সরাসরি বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতেন, তাহলে আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। যেহেতু তিনি আদালতে মামলা করেছেন। আমরা আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বিষয়টি নিয়ে কাজ করব।’ তিনি আরও বলেন, আদালত ওই দুই পুলিশ সদস্যের চাঁদাবাজির বিষয়টি পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।