শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতা, টং দোকান স্থাপন আর প্রতিবাদী আবৃত্তি-গানে অব্যাহত আন্দোলন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে টং দোকান স্থাপন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে আজ শনিবার ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী আবৃত্তি-গান পরিবেশনা করেছেন শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে চালানো হয়েছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এ ছাড়া স্থায়ী টং দোকান স্থাপন করা শুরু হয়েছে।

আজ রাত সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় গান-কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বিকেলে ক্যাম্পাসে পাঁচটি টং দোকান বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। টংগুলোর নামও দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে মিল রেখে। এর মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ২৮ শিক্ষার্থীর অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ‘ওরা ২৮ জন’, শিক্ষকের মন্তব্যের জেরে ‘চাষাভুষা টং’, এর আগে হওয়া আন্দোলনের নামানুসারে ‘অর্বাচীন’ নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাঁশবাগান ও লিচুতলা নামে আরও দুটি টং দোকান বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ দুপুর ১২টার দিকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বস্তা হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকা থেকে শুরু করে হ্যান্ডবল গ্রাউন্ড, ফুডকোর্ট এলাকা ও মুক্তমঞ্চের আশপাশের ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করেন।

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে থাকা টংগুলো অপসারণ করেন। এসব সেগুলোর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছেন উপাচার্য। অন্যদিকে টং দোকানগুলো অপসারণের পর থেকে শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে যেতে হতো। তিনি বলেন, উপাচার্যের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে পাঁচটি টং দোকান বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে টংগুলো স্থাপন করে পরিচালনা করবেন। পরবর্তী সময়ে টংগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।

শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিয়েছি, উপাচার্য ক্যাম্পাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। প্রতিদিন আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অহিংস আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’

১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে ওই আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।

প্রথম ৬ দিনে দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শুরু করা আমরণ অনশনের ১৬৩ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।