মাটি ফেলে রাখায় জমি উর্বরতা হারাবে। সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ হয়তো মিলবে, তবে ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হতে হবে তাঁদের।
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবনের কূলঘেঁষা ইউনিয়ন বাণীশান্তা। পশুর নদের পারের এই ইউনিয়নের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষিকাজ। তাঁদের সেই জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। মোংলা বন্দর চ্যানেলের অধিক গভীরতার জন্য পশুর নদ খনন করে মাটি ও বালু ফেলতে তাঁদের চাষযোগ্য জমি হুকুমদখল করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন্দরের প্রয়োজনে দীর্ঘদিন বালু, মাটি ফেলে রাখায় তাঁদের জমি উর্বরতা হারাবে। সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ হয়তো মিলবে, তবে ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হতে হবে তাঁদের। একসময় উদ্বাস্তু হয়ে ভিটেবাড়ি ছাড়তে হবে।
বাণীশান্তা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্য পীযূষ কান্তি রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য আমরা প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছি, রাখব। জমি রক্ষায় আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।’
গত মঙ্গলবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাঠঘাট, চায়ের দোকান সবখানে একই আলোচনা। ৩০০ একর জমি হুকুমদখল করে বালু ফেললে এলাকার মানুষের কী হবে, কীভাবে চলবে জীবন-জীবিকা। এই কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা নিয়ে বিস্তর আলোচনা, পরিকল্পনা চলছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে খনন প্রকল্পটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একনেকে অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় পশুর নদ থেকে প্রায় ২১৬ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালু উত্তোলন করার কথা। মোংলা বন্দরের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় এই মাটি, বালু দাকোপ ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন খাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ফেলতে হবে। মাটি ও বালু ফেলার জন্য মোংলার ৭০০ একরের বাইরে বাণীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর জমির প্রয়োজন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে খনন প্রকল্পের পরিচালক বাণীশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে মাটি ফেলার জন্য জমি হুকুমদখলের অনাপত্তির বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়। দাকোপের ইউএনও ওই জমিকে কৃষিজমি হিসেবে উল্লেখ করে সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠান। সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের পক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হুকুমদখলের নোটিশ দিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মালিকদের জমির দখল হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেই নোটিশ গ্রহণ না করে কৃষকেরা বিক্ষোভ করেন।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মারুফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ওটা কৃষিজমি, এটা ঠিক। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই জমিই হুকুমদখল করতে হচ্ছে। আর বন্দর যেহেতু আন্তর্জাতিক একটা বিষয় এবং প্রয়োজনে যেহেতু খনন করতে হবেই। আবার বিকল্প যেহেতু নেই, তাই কৃষকদের জমি না নেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহে জমির মালিকদের হুকুমদখলেরর ২০ ধারা নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁরা তা গ্রহণ করেননি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হবে। তারপর প্রক্রিয়া অনুযায়ী কার্যক্রম চলবে।