কুড়িয়ে পাওয়া শজারুর ছানাটির নাম রাখা হয়েছে ‘সন’। বর্গাচাষি সমাই সাঁওতাল ও জবা সাঁওতাল দম্পতির ঘরে বেড়ে উঠছে শজারুটি। সন সারা পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়, সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে, তবে খাবারের ডাক পেলে ছুটে আসে। সনের জন্য ঘরের বাইরে খড় দিয়ে ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে দেওয়া হলেও সে সেখানে ঘুমায় না। সনের পছন্দ এই দম্পতির ঘরের খাটের নিচের জায়গাটুকু।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি লোগাং ইউনিয়নের মঙ্গল সাঁওতালপাড়ায় সমাই সাঁওতালের বাড়ি। এই বাড়িতেই চার মাস ধরে বেড়ে উঠছে শজারুর ছানাটি। চার মাসে ছানাটি বড় হয়েছে বেশ। শরীরে দেখা দিয়েছে অনেক ছোট-বড় কাঁটা। কাঁটা দেখে অনেকে ভয় পেলেও ভয় পান না সমাইয়ের পরিবারের সদস্যরা। সমাই-জবা দম্পতির সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ছেলে বর্ষর সঙ্গে সনের বেশ ভাব।
সম্প্রতি মঙ্গল সাঁওতালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে শজারুর ছানা সন। সমাই বাজার থেকে ফিরে একটি চিপসের প্যাকেট নিয়ে ডাকতেই শজারুর ছানাটি চলে আসে বাড়িতে। চিপসের প্যাকেট মুহূর্তেই শেষ করে সমাইয়ের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে থাকে সন। সমাই বলেন, কাজ থেকে ফেরার পথে চার মাস আগে দুর্গম এক পাহাড়ি ছড়ার মধ্যে পড়ে থাকা অবস্থায় শজারুর ছানাটি পান তিনি আর তাঁর স্ত্রী। পরে শজারুটিকে উদ্ধার করে আশপাশে মা শজারুটির খোঁজ করেন। পরের দিন আবারও ওই এলাকায় মা শজারুটিকে খোঁজেন তাঁরা। না পেয়ে বাড়িতে নিয়ে এসে শজারুর ছানাটিকে লালন–পালন করছেন।
বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় বাংলাদেশে অনেক শজারু দেখা গেলেও বর্তমানে এই বন্য প্রাণীর অবস্থা বেশ বিপন্ন। এদের শরীরে অনেক কাঁটা থাকে। কাঁটাগুলো ১৪ থেকে ২৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। শজারুর ওজন ১০ থেকে ১৮ কেজি পর্যন্ত হয়। এরা সব ধরনের শাকসবজি, ফলমূল ও দানাশস্য খায়।
জবা জানালেন, শজারুটিকে তাঁরা পাকা পেঁপে, গাজর, আলু ও ভাত খাওয়ান। তবে তাঁদের পোষা সন সবচেয়ে বেশি খেতে পছন্দ করে বিস্কুট ও চিপস। আগে তাঁদের ছোট ছেলে বর্ষ শজারুটিকে চিপস-বিস্কুট কিনে দিলে রাগ করত। এখন সে এগুলো না খেয়ে আদরের সনকে খাওয়ায়।