কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। ২৫টি ইউনিয়নের শতাধিক চরে পানি উঠেছে। ইতিমধ্যে ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু চরের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
আজ শুক্রবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরে গিয়ে দেখা যায়, পুরো চরের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। প্রচণ্ড স্রোত বয়ে যাচ্ছে। একটি নৌকায় এক নারী জিনিসপত্র নিয়ে অন্য এলাকায় যাচ্ছেন। নাম জানালেন মমেনা বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানির চাপে একটা ঘর জিনিসপত্রসহ পানিতে ভেসে গেছে। এখন নৌকায় মালামাল নিয়ে পশ্চিম পাড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন। এখানে থাকা সম্ভব নয়। আরমান আলী নামের একজন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে ৮-৯ দিন কোনো কাজকর্ম নাই, বসে আছি। হঠাৎ পানি এসে বাড়িঘর ডুবে গেল। ৫ দিন থেকে পানিবন্দী। রান্না করব, সে উপায় নেই। খড়ি, বিছানা ভিজে গেছে।’
প্রথম আলো চর, নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের ব্যাপারীর চর, কাফনাসহ অসংখ্য চরে পানি উঠেছে। প্রথম আলো চরের ফজলার রহমান জানান, পানি দ্রুত বাড়ছে। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সদর, উলিপুর ফুলবাড়ী, চিলমারী, রাজারহাট উপজেলার অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। চর ও দ্বীপচরগুলো প্লাবিত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা। ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় অনেক পরিবার ঘরের ভেতর উঁচু মাচা ও নৌকায় দিন পার করছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা, যাত্রাপুর, পাঁচগাছি ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা; চিলমারী উপজেলার চিলমারী, অষ্টমীরচর, নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, চরগুলোতে পানি ওঠায় মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
সদরের যাত্রাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, তাঁর ইউনিয়নের পোড়ারচর, রলাকাটা, খেয়ার আলগা, বড়ুয়া ও মাঝিয়ালির চরের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। দ্রুতই পৌঁছে দেওয়া হবে।’