কুষ্টিয়ায় সরু চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা কমানোর ঘোষণা

চাল
ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ায় কেজিপ্রতি সরু চালের দাম দুই টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ। আজ রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ‘অবৈধ মজুতদারি রোধে করণীয় ও বাজার তদারকি’–সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের উপস্থিতিতে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সভায় আবদুর রশিদ বলেন, ‘আজ থেকে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা করে সরু চালের দাম কমানোর ঘোষণা দিলাম।’ এ ছাড়া রমজানে চালের দাম বাড়বে না বলে আশ্বাস দেন।

এর আগে খাদ্যমন্ত্রী যশোর থেকে সরাসরি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার তিনটি অটোরাইচ মিল পরিদর্শনে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন।

খাদ্যমন্ত্রী প্রথমে ফ্রেশ অ্যাগ্রোর অটোরাইচ মিল পরিদর্শন করেন। সেখানে তেমন কোনো অসংগতি পাননি। এরপর তিনি রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের মালিক আবদুর রশিদের মিলে যান। মন্ত্রী ধানের গুদাম পরিদর্শনে গেলে গুদামের চাবি পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে পাশের আরেকটি গুদামে গিয়ে মন্ত্রী দেখতে পান, ধানের বস্তার চারপাশে মাকড়সার জাল। এক থেকে দুই ইঞ্চি পুরু ময়লার স্তূপ। এরপর মন্ত্রী দেশ অ্যাগ্রো রাইচ মিলে যান। মিলের মালিক আবদুল খালেক মন্ত্রীকে একটি ফাঁকা গুদাম দেখান। পাশের আরও পাঁচটি গুদামে নজর পড়ে মন্ত্রীর। ওই গুদাম খুলে চালের বস্তার স্তূপ থেকে হতভম্ব হয়ে পড়েন তিনি।

কুষ্টিয়ায় খাজানগরে চালের মোকাম পরিদর্শনের পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মিল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার

পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে দুপুর ১২টায় মিলমালিকদের নিয়ে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী। বেলা তিনটা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা চলে এ সভা। সভায় মিলমালিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘সরু চালের দাম সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ানো হয়েছে। রংপুর, রাজশাহীতে আপনারা কথা দিয়েছিলেন, দাম আর বাড়বে না। কিন্তু সেই কথা রাখেননি। দাম বাড়ছেই। কুষ্টিয়ার সরু চাল সারা দেশকে নিয়ন্ত্রণ করে। কীভাবে আগামীকাল থেকে সরু চালের দাম কমাবেন, সেই কথা শুনতে চাই।’

সভায় দেশ অ্যাগ্রো রাইচ মিলে চালের মজুত বেশি কেন জানতে চান মন্ত্রী। জবাবে দেশ অ্যাগ্রোর মালিক আবদুল খালেক বলেন, ‘গুদামে ধান নেই। তাই যা চাল উৎপাদন হয়েছে, সেগুলো আগামী দিনের জন্য রাখা আছে।’ এরপর মন্ত্রী বলেন, ‘মামলা করার মতো মজুত গুদামে আছে। চাল আছে, কিন্তু বিক্রি করবেন না। আপনার ইচ্ছেমতো কি বাজার চলবে?’

প্রতিযোগিতার কারণে সরু চালের দাম বাড়ে বলে মন্তব্য করেন জেলা চালকল মিলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান। তিনি আশ্বাস দেন, ‘কাল থেকে সরু চাল কেজিপ্রতি ৫৯ টাকার ওপরে থাকবে না।’

সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, সরকারকে বিব্রত করতে দলে ভিড়ে কেউ কেউ চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়নের কথা বলতে পারছি না। এটা শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে।’

কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালের মোকাম পরিদর্শনে যান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ সময় মন্ত্রী তিন অটোরাইচ মিল পরিদর্শন করে গুদামে অতিরিক্ত চাল ও ধানের মজুত দেখতে পান

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকের ধান গোলায় নেই, যা আছে, সব আড়ত ও মিলমালিকের গুদামে। বন্ধ থাকা মিলের গুদামে ধান কিনে মজুত রাখা হয়। এটা একশ্রেণির মিলমালিক করে থাকেন। খাজানগরে যা দেখলাম, মামলা হওয়ার মতো অবস্থা। মামলা হওয়া দরকার।

প্রতিটি মিল প্রতিদিনের মজুত ও বিক্রির হিসাব জেলা প্রশাসনকে জানাবে। জেলা প্রশাসক এ কাজের তদারক করবেন। এ ছাড়া মন্ত্রী জেলা প্রশাসককে দেশ অ্যাগ্রো রাইচ মিলে এখনই ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানোর নির্দেশ দেন। পাশাপাশি অন্যান্য মিলেও অভিযান চালানোর কথা বলেন।