কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর এলাকা থেকে আহত অবস্থায় একটি বিপন্নপ্রায় মদনটাক উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয় এক তরুণের সহায়তায় পাখিটি উদ্ধার করেন এসআই সোহেল নামের এক ব্যক্তি। তিনি পাখি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষক হিসেবে পরিচিত। পাখিটিকে তিনি কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদসংলগ্ন কমলাপুর এলাকায় নিজ বাড়িতে রেখে শুশ্রূষা দিচ্ছেন। বন অধিদপ্তরের রেসকিউ সেন্টারে পাখিটিকে পাঠাতে যোগাযোগ করেছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কমলাপুর এলাকায় কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি এসআই সোহেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মদকটাক পাখিটির মুখে মাছ তুলে দিচ্ছেন তিনি। পাখিটির দুটি ডানার বেশ কয়েকটি পালক কাটা, সে জন্য উড়তে পারছে না। অসুস্থ থাকায় চুপচাপ আছে।
এসআই সোহেল জানান, গতকাল রাত ৯টার দিকে তিনি ঢাকার বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে ফোনে জানতে পারেন, কুষ্টিয়ার হরিপুর এলাকায় একটি মদনটাক পাখি ধরা পড়েছে। এমন খবর শোনার পরপরই তিনি দ্রুত সেখানে ছুটে যান। গিয়ে দেখতে পান, পাখিটিকে অনেক মানুষ ঘিরে রেখেছে। দুই ডানার পালক কেটে ফেলায় পাখিটি উড়তে পারছে না। সেখাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সুমন আলী নামের এক তরুণ তাঁকে জানান, পাশের বানিয়াপাড়া এলাকায় কয়েকজন তরুণ গাছ থেকে পাখিটি ধরে আনেন। তাঁরা পাখিটিকে জবাই করে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সুমন আলী খোঁজ পেয়ে বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করে জানান। এরপর বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি ফোন পান।
২৪ বছর ধরে পাখি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের কাজে যুক্ত এসআই সোহেল বলেন, কুষ্টিয়ায় এই প্রথম মদনটাকের দেখা মিলল। উদ্ধার করা পাখিটির বয়স কম। সুমন আলী নামের ওই তরুণের তৎপরতায় পাখিটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রাতেই পাখিটি বাড়িতে এনে একটি কক্ষে রাখা হয়। বেশ দুর্বল আছে। তাকে বিভিন্ন ধরনের মাছ খাওয়ানো হয়েছে। খুলনা বন অধিদপ্তরের রেসকিউ সেন্টারে পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে।
মদনটাক একটি বিপন্নপ্রায় পাখি। ইংরেজি নাম ‘লেসার অ্যাডজুট্যান্ট’। বৈজ্ঞানিক নাম Leptoptilos javanicus । এটি ‘সিকোনিডাই’ পরিবারভুক্ত বড় আকারের জলচর পাখি। এটি লম্বায় ৮৭ থেকে ৯৩ সেন্টিমিটার (৩৪ থেকে ৩৭ ইঞ্চি)। পায়ের উচ্চতা ১১০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার। ওজন চার থেকে সাড়ে পাঁচ কেজি হয়। মাথার তালু, কপাল, গলা পালকহীন। গলা লালচে বা হলুদ চামড়া দিয়ে আবৃত। ঠোঁট শক্ত ও রং ময়লাটে হলুদ। প্রজনন মৌসুমে ঠোঁটের গোড়া লালচে হয়। ওপরে পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত পালক উজ্জ্বল ধাতব কালো। লেজের প্রান্ত ময়লাটে সাদা। গলার নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত সাদাটে। পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক মদনটাকের মাথায় ও ঘাড়ে পালক দেখা যায়। প্রধান খাবার মাছ, শামুক, ইঁদুর, ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির সরীসৃপ। মদনটাকের প্রজনন মৌসুম জুন থেকে জুলাই। এরা বাসা বাঁধে গাছের উঁচুতে। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮ থেকে ৩০ দিন। ছানা উড়তে শিখে ৫০ দিনের মধ্যে। অতিরিক্ত ওজনের কারণেই এরা বিপাকে পড়ে যায়।