কুষ্টিয়া শহরের কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রকাশ্যে আবির হোসেন (১৪) নামের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের একটি ভবনে শ্রেণিকক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আবির কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে কুষ্টিয়ার মজমপুর ঝাউতলা এলাকার মোহাম্মদ শাহজাদা ওরফে গয়ার ছেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় আবিরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আবির ও তার সহপাঠীদের অভিযোগ, কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের একদল শিক্ষার্থী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি তারা বিদ্যালয়ে ভাঙচুর করে। ঘটনার পর বিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আহত শিক্ষার্থীর পরিবার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলমান। পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি কক্ষ সাজানো হচ্ছিল। দুপুরে পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আবিরেরও পরীক্ষা ছিল। সে পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে যাওয়ার জন্য মাঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তখন জিলা স্কুলের একদল শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কলকাকলী বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তাদের দেখে ভয়ে দৌড় দিয়ে আবির বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা আবিরের ডান পায়ে ছুরিকাঘাত করে। এতে গভীর ক্ষত তৈরি হয়। এ সময় প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের ওপর চড়াও হয় ওই শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় চারতলা নতুন ভবনের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে।
কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেব-উন-নিসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মজমপুর এলাকার বাসিন্দা ও জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সংগ্রামের নেতৃত্বে ছেলেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। আমার ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করেছে। তারা স্কুলের দুটি ভবনের সব জানালা ভাঙচুর করেছে। তাদের সঙ্গে জিলা স্কুলের শাহরিয়ার ফেরদৌস, ইশতিয়াক আহমেদ, স্বাধীন, আওয়াল, জুয়েল ইসলাম, তুহিন আহমেদ, হৃদয় হোসেন, ইমন খানসহ অনেকেই অংশ নেয়। আমরা থানায় মামলা করব।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আবিরের পায়ে গভীর ক্ষত। তার বন্ধুরা তাকে স্ট্রেচারে করে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় নিয়ে যাচ্ছে। আবির প্রথম আলোকে জানায়, সে একজনকে চেনে, জিলা স্কুলে পড়ে। তাকে দেখলে চিনতে পারবে। তবে নাম বলতে পারছে না। বাকিদের সে চেনে না। তার সঙ্গে কারও কোনো ঝামেলা ছিল না। কী কারণে ছুরিকাঘাত করেছে তা বলতে পারছে না।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, খুব ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রচুর রক্তের প্রয়োজন।
আবিরের বাবা মোহাম্মদ শাহাজাদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মজমপুরের সংগ্রামের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তারা বিএসবি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আমার ছেলে তো নিরীহ। তাকে কেন মারা হলো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ লাইনস স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে কলকাকলী বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পুলিশ লাইনস স্কুলের সেই শিক্ষার্থীর কয়েকজন বন্ধু জিলা স্কুলে পড়ে। সেই ঘটনার জেরে তিন দিন আগে কলকাকলী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রদীপকে মারধর করে জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আজ তারা জোটবদ্ধ হয়ে কলকাকলী বিদ্যালয়ে হামলা চালায়। তাদের প্রেমসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ঝামেলা চলছিল। জিলা স্কুল ও কলকাকলী বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর একই। জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রাচীর বেয়ে কলকাকলী বিদ্যালয়ে ঢুকে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ আছে।
ঘটনার পরপরই কলকাকলী বিদ্যালয়ে যান কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জিলা স্কুলের ছেলেরা দলবল নিয়ে হামলা চালিয়েছে। একজন ছাত্রকে ছুরি মেরেছে তারা। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে ভাঙচুর করেছে। কারা কারা জড়িত, তাদের নাম পাওয়া গেছে। মামলা হলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এফতে খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন,‘সকালে ছেলেরা উত্তেজিত হয়। আমি তাদের ঠান্ডা করার চেষ্টা করি। তারা আমার কথা না শুনে পুলিশের সামনেই কলকাকলী বিদ্যালয়ে গিয়ে এক ছাত্রকে মেরেছে। স্কুলে ভাঙচুর চালিয়েছে। এটা লজ্জাজনক। আমার স্কুলের এক ছাত্রের কাছ থেকে একটা ছুরি উদ্ধার করে রেখে দিয়েছি। যারা জড়িত, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’