এই কাজগুলোতে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা কেউ জানেন না। করোনা মহামারির মধ্যেই কাজগুলো করা হয়। কোন প্রকল্পের আওতায়, সে তথ্যও জানা যায়নি।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার পাঁচটি উন্নয়নকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা কেউ জানেন না। পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুণের তত্ত্বাবধানে কাজগুলো করা হয়েছে। কিন্তু এসব কাজের জন্য ছিল না কোনো প্রকল্প, আহ্বান করা হয়নি দরপত্রও। কোন খাত থেকে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, সে বিষয়েও জানেন না পৌরসভার কাউন্সিলররা।
কাউন্সিলরদের অভিযোগ, মেয়র একা তদারকি করে এসব কাজ করেছেন। সাধারণত সরকারি উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে সভা করে রেজল্যুশন, দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করার বিধান থাকলেও ওই পাঁচ কাজের ক্ষেত্রে এসব কিছুই মানা হয়নি।
কয়েকজন কাউন্সিলর ও প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি কাজের মধ্যে আছে কুমারখালী থানার সৌন্দর্যবর্ধন, পৌর বাস টার্মিনালের সংস্কার, সেরকান্দি এলাকায় ১০০ মিটার সিসি সড়ক নির্মাণ, কুণ্ডুপাড়ায় ফরিদ আহমেদ কমিশনারের বাড়ির সামনে সিসি সড়ক নির্মাণ এবং এলঙ্গী এলাকায় মাথাভাঙা মন্দিরের ছাদ নির্মাণ ও সংস্কার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, মেয়র শামসুজ্জামান অরুণ ও সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলাম মিলে সব কটি কাজ শেষ করেছেন। কোনো কাউন্সিলর কিছু বলার সাহস পাননি। মেয়র শামসুজ্জামান অরুণ কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
কুমারখালী থানার ফটকের পাশে ফোয়ারা, স্যালুট ডায়াস ও পার্ক নির্মাণ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। এসব কাজের বিষয়ে ১০ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, গত এপ্রিল-মে মাসে এই কাজ করা হয়। ফোয়ারার পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন ফটকও করা হবে। মেয়র নিজে কাজগুলো করে দিয়েছেন। কাজের কোনো কাগজপত্রের অনুলিপি থানায় আছে কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, কোনো ঠিকাদার ছিলেন না। মেয়র সব জানেন। পুলিশের অর্থায়নেও কোনো কাজ করা হয়নি বা হচ্ছে না।
কুমারখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালের ঠিক পেছনে গাড়ির র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। কয়েকটি দোকানও সংস্কার করা হয়। র্যাম্পের ওপর দুটি মাইক্রোবাস দাঁড় করানো। চালকেরা জানান, কয়েক মাস আগে পৌরসভা থেকে এসব কাজ করে দেওয়া হয়েছে।
কুণ্ডুপাড়া এলাকায় ফরিদ আহমেদের বাড়ির সামনে সিসি সড়কের পাশে বসার জন্য টাইলস লাগানো আসনও তৈরি করা হয়েছে। সড়কটি অন্তত ১০০ মিটার দীর্ঘ। স্থানীয় বাসিন্দা বদরুল বলেন, আগস্টে এ সড়ক পৌরসভা নির্মাণ করে দিয়েছে। পৌরসভার পাশে সেরকান্দি এলাকায় একইভাবে একই সময়ে সিসি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
পাঁচটি কাজ নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে পৌরসভায় গিয়ে মেয়র শামসুজ্জামান অরুণকে পাওয়া যায়নি। প্রকৌশলীর দপ্তরের সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো কাজেরই এখনো দরপত্র হয়নি। অচিরেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এর বেশি কিছু জানতে চাইলে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনিই সব জানেন।’
পরে মুঠোফোনে মেয়র শামসুজ্জামান অরুণ বলেন, থানার কাজের দরপত্রের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়েছে। কত টাকার কাজ, সেটা জানা নেই। বাকি চারটি কাজের দরপত্র আগেই করা হয়েছে। ঠিকাদার কারা ছিলেন, সেটা প্রকৌশলীর কার্যালয় বলতে পারবে। সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে মেয়র বলেন, ‘ও কিছু জানে না।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ শূন্য। সহকারী প্রকৌশলীর পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন খোকসা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আকরামুজ্জামান। পাঁচটি উন্নয়নকাজের বিষয়ে তিনি বলেন, থানার ভেতর ও বাসস্ট্যান্ডের কাজের কোনো টেন্ডার হয়নি। বাকি তিনটি কাজ তাঁর অজানা।
প্রকল্প প্রস্তাবনা ও দরপত্রের আগেই কাজ শেষ হতে পারে কি না, জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মৃণাল কান্তি দে বলেন, প্রতিটি কাজের জন্য সভা করে রেজল্যুশন, দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করার বিধান রয়েছে। দরপত্র ও ঠিকাদার ছাড়া কোনো কাজ হতেই পারে না। এটা অসম্ভব। যদি না করা হয়ে থাকে, সেটা বিধি অনুযায়ী কাজ হতে পারে না।