কুষ্টিয়ায় কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ তীব্র হয়েছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। জেলা পুলিশের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ জন্য সবাইকে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে জানান, গত ২২ এপ্রিল থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি দল এ কাজ করেছে। তাতে দেখা গেছে, জেলায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বেশ জোরালো হয়েছে। বিশ্লেষণের এসব তথ্যের কপি জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে দেওয়া হয়েছে।
১৯ পৃষ্ঠার ওই কপি প্রথম আলোর কুষ্টিয়া কার্যালয়ও পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ১০ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মোট রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৯২৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৬৩ জন। মারা গেছেন ১৯ জন। সুস্থতার হার ৪৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মৃত্যুর হার ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৬৩৪ জন, নারী ২৩০ জন ও শিশু ৬৩ জন।
বয়সভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ২৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। এরপর রয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বয়সী ব্যক্তিরা। এ সংখ্যা ১৯৭। ৫০–এর বেশি রোগীর সংখ্যা জেলায় ১৮৯। মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ৪ জন ৩১ থেকে ৪০ বছরের। অন্যরা ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সের।
সদর উপজেলায় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৫০৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ২১৫ জন। মারা গেছেন ১৩ জন। মোট আক্রান্ত ব্যক্তির ৫৫ শতাংশই সদর উপজেলায়। মোট মৃত্যুর ৬৯ শতাংশই সদর উপজেলায়।
২২ এপ্রিল জেলায় প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। এরপর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত ৩৪ দিনে জেলায় রোগী শনাক্ত হন মাত্র ৩৬ জন। ঈদের পর ১০ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮৯১ জন। ৯৬ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন ঈদের পর। এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪২ জন। বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৮৬ জন।
পেশাভিত্তিক শনাক্তের চিত্রে দেখা গেছে, গৃহিণী ১৬১ জন, ব্যাংকার ৬৬ জন, ব্যবসায়ী ৭০ জন, কৃষক ৫৩ জন, স্বাস্থ্যকর্মী ৫২ জন, চিকিৎসক ৬ জন, সরকারি চাকরিজীবী ৪৩ জন, বিআরবি গ্রুপের কারখানায় চাকরিজীবী ৪৮ জন, পুলিশ সদস্য ৪৩ জন, জনপ্রতিনিধি ৬ জন। স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ শতাংশ রোগী। বাকি ১৬ শতাংশ রোগী জেলার বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে আসেন।
স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা মনে করছেন, জেলায় যেহেতু তরুণ শ্রেণি বেশি আক্রান্ত, সেহেতু এটা খুবই ভাবার বিষয়। বর্তমানে জেলায় কোথাও কোনো লকডাউন নেই। ঈদের আগে ভিড় বেশি বাড়বে। পশুহাটগুলোতে জটলা বাঁধবে। সংক্রমণ হু হু করে বাড়বে। তাই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কমাতে হলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সমন্বয়ক এ এস এম মুসা কবির প্রথম আলোকে জানান, পুলিশ সময়োপযোগী তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এতে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। বয়স ও পেশাভিত্তিক আক্রান্তের বিষয়টি ভাবার বিষয়। হয়তো এই বয়সের মানুষেরা অসচেতনভাবে বাইরে বের হয়েছিলেন। গৃহিণীরা বাড়িতে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এসব সংক্রমণ কমানোর জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন।
সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হতে বারবার বলা হচ্ছে। জনগণ সচেতন না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।