অস্ত্র, বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা ও সন্ত্রাস দমন আইনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১০৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনজন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আরেকজন যুবদল নেতা। তাঁদের দাবি, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে প্রতিপক্ষ তাঁদের বিভিন্ন সময় মামলায় জড়িয়েছে।
এ ছাড়া হত্যা, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকলাপ, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজি, প্রতারণা ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধসহ নানা অভিযোগে ২০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরও ৩০টি মামলা আছে।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১৭টি মামলা। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীর কাছে সম্প্রতি দাখিল করা হলফনামায় প্রার্থীরা মামলার এ তথ্য দিয়েছেন। নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ১২০ জন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় লোক ছাড়া সাধারণ ভোটাররা একজন প্রার্থীকে সব দিক বিবেচনা করেই ভোট দেবেন।
হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের সদস্য কাজী গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা ও সন্ত্রাস দমন আইনে ২৭টি মামলা আছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের সদস্য মো. মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা আছে ২৫টি।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ একরাম হোসেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২৫টি মামলা আছে। একরাম একসময় ছাত্রশিবির করতেন। এলাকায় তিনি জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত। এই তিন প্রার্থীই টানা দুই মেয়াদে নিজ নিজ ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন।
১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আদালতে মামলার হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত। এরপরও এলাকাবাসীর পাশে ছিলাম, আছি। জনগণ কাজের কারণে আমাকে আবারও বেছে নেবেন।’
২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও যুবদল নেতা মো. বিল্লালের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক আইনসহ নানা অভিযোগে মামলা আছে ২৬টি। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. খলিলুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটিসহ মোট পাঁচটি মামলা আছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মো. আবদুস সত্তারের বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে হত্যার ঘটনায় দুটি খুনের মামলা আছে।
২৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবুল হাসানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা আছে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা আছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সরকার মাহমুদ জাবেদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা আছে।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিনা ভোটে জয়ী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দ রায়হান আহমেদের বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাখাওয়াত উল্লাহ শিপনের বিরুদ্ধে মারামারির একটি মামলা, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুল বিন জলিলের বিরুদ্ধে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা ও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রোকন উদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় দুটি মামলা আছে।
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলফনামায় তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা মামলার কথা নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা অতীতে তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা মামলার কথাও হলফনামায় উল্লেখ করেন। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি। হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে নির্বাচনবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’