কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যাকাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হলো আজ বুধবার। পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও নেপথ্যের মূল হোতাদের নাম জানতে চান। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীর নাম–ঠিকানা জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানান তাঁরা।
গত ২২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় কুমিল্লা নগরের পাথুরিয়াপাড়া থ্রিস্টার এন্টারপ্রাইজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।
হত্যা মামলার বাদী ও কাউন্সিলর মো. সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত মূল পরিকল্পনাকারীর নাম আসছে না। দিন দিন বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। ক্রসফায়ারে যাঁরা মারা গেছেন, এটা কোনো সমস্যার সমাধান না। এর পেছনে মূল হোতা কারা, তা বের করতে হবে। পুলিশের সেটা প্রকাশ করা উচিত। এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা কে, তা জনগণের জানা উচিত।
গতকাল দুপুরে কাউন্সিলর মো. সোহেলের বাসায় তাঁর একমাত্র ছেলে সৈয়দ মো. হাফিজুল ইসলাম নাদিম বলেন, যাঁরা কাজটা ঘটিয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। যাঁরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাঁরা তো এমনি এমনি করেননি। যাঁরা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হোক।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, রিমান্ডে ও আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেখানে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এতে পরিকল্পনাকারী, অস্ত্রের জোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও অর্থের জোগানদাতার নামও বলেছেন আসামিরা। সেগুলো ভাগ ভাগ করে সন্নিবেশ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। অভিযোগপত্র দেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
আদালত, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর ও তাঁর সহযোগী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৩ নভেম্বর রাত সোয়া ১২টায় ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথমে কোতোয়ালি মডেল থানার চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কায়সার হামিদকে। ৩ ডিসেম্বর মামলা স্থানান্তর করে ডিবির পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়াকে তদন্তভার দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ১১ আসামির মধ্যে তিনজন পুলিশের সঙ্গে ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ও সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলার ১১ নম্বর আসামি নগরের সুজানগর বউবাজার এলাকার কানাই মিয়ার ছেলে রনি (৩২) পলাতক। এজাহারভুক্ত আসামির বাইরে গ্রেপ্তার হওয়া মো. নাজিম, মো. রিশাত, মোহাম্মদ রাব্বী ইসলাম, ইমরান খন্দকার কারাগারে আছেন।
এদিকে গতকাল রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির উপপরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, এ মামলায় জাহিদ হাসান ওরফে ইমরান (১৯) নামের একজনকে ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাথুরিয়াপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৮ ডিসেম্বর জাহিদ হাসানকে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালতের বিচারক মাজহারুল হক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২০ ডিসেম্বর রিমান্ড শেষে একই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন জাহিদ হাসান। পরে তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার ১১ আসামির মধ্যে তিনজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। সাতজন কারাগারে। একজন পলাতক। এজাহারের বাইরে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনও কারাগারে আছেন।