১৫ বছরের কিশোর। পরনে চেক টি-শার্ট ও জিনস প্যান্ট। হাতে হাতকড়া। ফলে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না সে। আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় এই চিত্র দেখা গেছে। তার পাশে হাতে অস্ত্র নিয়ে ছিলেন এক পুলিশ সদস্য।
ওই কিশোরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের নগরের খুলশী ও বায়েজিদ বোস্তামী থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে চারটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ইয়াবা ও অস্ত্র (ছুরি) উদ্ধারের ঘটনার পৃথক দুই মামলায় থানা থেকে গতকাল তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাকে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-পুলিশের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, কিশোরটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য।
আগে শিশু আদালত আলাদা থাকলেও এখন চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচার হয়। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর আসামিকে হাতকড়া পরানো বেআইনি। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শিশু আইনের ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের পর কোনো শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি লাগানো যাবে না।
মামলার আসামি শিশুকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা থেকে চট্টগ্রাম আদালতে নিয়ে আসেন ওই থানার পুলিশ কনস্টেবল সুবিকাশ বড়ুয়া। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুলে হাতকড়ার চাবি ফেলে এসেছেন। তাই হাতকড়া খোলা যাচ্ছে না। শিশুদের হাতকড়া পরানো বেআইনি জানেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভুল হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কিশোরটিকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামানোর আগেও হাতকড়া ছিল। গাড়ি থেকে নামিয়ে তাকে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় জিআরও (সাধারণ নিবন্ধন) কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময়ও হাতে হাতকড়া ছিল। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে কিশোরকে আদালত ভবনের নিচতলায় হাজতখানায় বুঝিয়ে দেন কনস্টেবল সুবিকাশ বড়ুয়া। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটিকে দাগি আসামিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদক বিষয়টি নজরে আনার সঙ্গে সঙ্গে হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই আবুল বাশার কিশোরকে আলাদা কক্ষে রাখেন।
কিশোরকে হাতকড়া পরানোর বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, কিশোর আসামিকে কেন হাতকড়া পরানো হলো, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের উপস্থিতিতে ওই কিশোরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার বাবা ভ্যানচালক, মা গৃহিণী। অভাবের সংসার তাই পড়ালেখা করতে পারেনি। সঙ্গদোষে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তিন দিন আগে জামিনে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে গাড়িচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। এর মধ্যে আবার ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। এবার ছাড়া পেলে সবকিছু ছেড়ে গাড়িচালক হওয়ার ইচ্ছে তার।