সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া এবং সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় আদালতে অভিযোগ (চার্জ গঠন) গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহারিয়ার কবিরের আদালতে এসব মামলার অভিযোগ গঠন করেন।
বৃহস্পতিবার ওই তিন মামলার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছসহ ১১ জন আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সুরঞ্জিত সেনের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনার দুটি ও শাহ এ এম এস কিবরিয়ার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হওয়া বিস্ফোরক মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এসব মামলার বিচার শুরু হয়েছে।
সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সারওয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন, সুরঞ্জিত সেনের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনার দুটি মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর শাহ এ এম এস কিবরিয়ার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হওয়া বিস্ফোরক মামলায়ও লুৎফুজ্জামান বাবর, আরিফুল হক চৌধুরী, জি কে গউছকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে এই তিন মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলো।
সারওয়ার আহমদ আরও জানান, বৃহস্পতিবার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ থাকলেও সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই তিন মামলায় কারাবন্দী আছেন লুৎফুজ্জামান বাবর। তাঁকেসহ কারাবন্দী ৯ আসামিকে বেলা ১১টায় আদালতে আনা হয়। জামিনে থাকা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছও আদালতে হাজির হন। মোট ১১ আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন হয়।
সাবেক রেলমন্ত্রী ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জের দিরাইবাজারে ২০০৪ সালের ২১ জুন একটি রাজনৈতিক সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। সমাবেশে তখন প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান। গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক যুবলীগের কর্মী ঘটনাস্থলে নিহত ও ২৯ জন আহত হন। ওই ঘটনায় দিরাই থানার এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। মামলার তদন্তে আসামি শনাক্ত হয়।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ পাঁচজন। এতে আহত হন ৭০ জন।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। এ হত্যা মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১১ সালে অধিকতর তদন্তে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। পরে তৃতীয় দফায় তদন্তে লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গউছসহ প্রায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে দুজন আসামি মারা গেছেন।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এক প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটো ঘটনা ঘটেছে ২০০৪ ও ২০০৫ সালে। আমাকে জড়ানো হয়েছে ২০১৩ সালে। ওই বছর আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হই। শুধু আমি নই, সবাই বলছেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় দুটো ঘটনায় আমাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে। যখন মেয়র ছিলাম না, তখন তো ৮ থেকে ৯ বছর এই দুই ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। ২০১৩ সালের ১৫ জুন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ঠিক এক বছরের মাথায় আমাকে পুনরায় তদন্তের নামে দুটো ঘটনাতে জড়ানো হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলাম। জামিনে মুক্ত হয়ে আবার সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এখন আবার এসব অভিযোগ সামনে আনা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার হলে অবশ্যই আমি এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাব। নগরবাসী ও দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই আমি।’