কিট নেই, রাজশাহীতে করোনার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বন্ধ

কিট সংকটে রাজশাহী নগরে বন্ধ রয়েছে করোনার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। আজ সোমবার দুপুরে নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে বুথে
প্রথম আলো

রাজশাহীতে কিটের অভাবে আজ সোমবার থেকে করোনার র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, কিটের সরবরাহ পাওয়া সাপেক্ষে ভবিষ্যতে এই পরীক্ষা চালু হতে পারে। তবে সারা দেশে বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে এই পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হলেও রাজশাহীর কোনো বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

গত জুন মাসে রাজশাহীতে দৈনিক করোনা শনাক্তের হার চূড়ায় উঠেছিল। প্রতিদিনই ৫০ শতাংশের ওপরে শনাক্ত হচ্ছিল। তখন দ্রুত রোগী শনাক্ত করতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৬ জুন থেকে নগরে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথমে পাঁচটি বুথ থাকলেও পরে বাড়িয়ে ১৩টি করা হয়। গতকাল রোববার পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৭৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৫ হাজার ৫৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সে সময় করোনা পরীক্ষায় নগরবাসীকে উৎসাহিত করার জন্য যাঁরা টিসিবির পণ্য কিনতে আসতেন, তাঁদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। টিসিবির কেন্দ্রের পাশেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বুথ করা হয়। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে ১০ মিনিটের মধ্যে ফল জানানো হতো।

গতকাল রোববার পর্যন্ত অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে ৫৬ হাজার ৭৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৫ হাজার ৫৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

গত কয়েক দিন থেকে কিটের সংকট দেখা দিলে শুধু উপসর্গ থাকলে এবং বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের অ্যান্টিজেনে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। কম বয়সী এবং উপসর্গ না থাকলে অনেককেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে পাঁচজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ থেকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা পুরোপুরি বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বুথের টেবিল-চেয়ার উল্টে রাখা হয়েছে, কোথাও বুথের ভেতরে অস্থায়ী দোকানিরা বসে গেছেন। রাজশাহী নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদের পাশের বুথে পরীক্ষা করাতে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন নগরের হাদির মোড় এলাকার নাসরিন খাতুন (৪০)। তিনি বলেন, প্রতিদিনই পরীক্ষা হয় জেনে এসেছিলেন। পাশের একজন দোকানি বলেছেন, আজ ছুটির দিন। তাই পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা

নাসরিন খাতুনের কথা শুনে রাজশাহীর সিভিল সার্জনকে ফোন করা হলে জানা যায়, কিট–সংকটের কারণে পরীক্ষা আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, পরবর্তী সময়ে কিট পাওয়া সাপেক্ষে পরীক্ষা করা হবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিস থেকে আমরা ৭০০-৮০০টি করে কিট পেতাম। সেটা দিয়ে কয়েক দিন পরীক্ষা করতাম। সবশেষ ৭৫০ কিট পেয়েছিলাম। সেটাও শেষ হয়ে গেছে। তাই টেস্ট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কিট এলে আবার কার্যক্রম শুরু হবে।’

এদিকে সারা দেশে বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হলেও রাজশাহীর কোনো প্রতিষ্ঠানকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, অন্য শহরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমতি নিয়েছে। রাজশাহীর প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমতিই চায়নি। এ জন্য তাদের দেওয়া হয়নি।

তবে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলার সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, রাজশাহীর প্রথম সারির অন্তত ১৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করোনার র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে আগ্রহী। কিন্তু তাদের লাইসেন্স নবায়ন না থাকার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এ জন্য নবায়ন আটকে রয়েছে। সেই কারণে আবার র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমরা পরিদর্শন টিম গঠনের চেষ্টা করছি। তারপর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিদর্শন করা হবে।’