কারেন্ট পোকায় মরছে ধানগাছ

কারেন্ট পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত খেত দেখাচ্ছেন কৃষক। গতকাল দুপুরে নীলফামারী সদর উপজেলার মহব্বত বাজিতপাড়া গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
কারেন্ট পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত খেত দেখাচ্ছেন কৃষক। গতকাল দুপুরে নীলফামারী সদর উপজেলার মহব্বত বাজিতপাড়া গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারী সদর উপজেলায় আমন ধান পাকার শেষ মুহূর্তে খেতে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের (কারেন্ট পোকা) উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। এ কারণে পুরোপুরি পাকার আগেই অনেক কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলছেন।

কৃষকেরা জানান, খেতে কারেন্ট পোকার উপদ্রব দেখা দেওয়ায় গাছ পুড়ে যাওয়ার রং ধারণ করে মরে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকে আধা পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। অনেকে স্থানীয় বাজারের দোকানদারদের পরামর্শে ধানে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ও কচুকাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ভরা ধানখেত। শিষের ভারে নত ধানগাছ। এসব খেতের কিছু কিছু অংশের ধানগাছ মরে গেছে।

কচুকাটা ইউনিয়নের মহব্বত বাজিত পাড়া গ্রামে ধান কাটছিলেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তিন বিঘা জমিত ধান নাগাইছি। ধান পুরো পাইকতে আরও সাত দিন নাইগবে। কিন্তু খেতে কারেন্ট পোকা দেখা দিছে। এই জন্য ধান কাটির ধইরছে। আইজ দুই বিঘা কাটমো। কাইল বাকি এক বিঘা কাটমো।’

ওই গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিত এবার আমন আবাদ করেছি। এর মধ্যে আধা বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকা ধরেছে। গতকাল কীটনাশক দিছি। এখন কী হবে জানি না।’ তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে ভালোভাবে আবাদ হলো। এখন ধান পাকার সময় প্রায় ১০ দিন ধরে এলাকায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিল। বাজিতপাড়া গ্রামের সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে এবার আমন আবাদ করেছি। দুই বিঘায় ১১ জাতের এবং দুই বিঘায় মামুন স্বর্ণ জাতের ধান লাগিয়েছি। মামুন স্বর্ণ ধান কেটেছি। বাকি দুই বিঘায় কারেন্ট পোকা দেখা দিয়েছে। এক বিঘায় কীটনাশক ছিটাতে লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন শ টাকা। অথচ ধানের দাম নেই। গতকাল শুকিয়ে ৭৫ কেজির এক বস্তা ধান বিক্রি করেছি আট শ টাকায়।’

পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের উত্তর পাড়া গ্রামের শামসুল হক বলেন, ‘আমি এ বছর ১৪ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছি। এসব জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে কারেন্ট পোকা ধরেছে। এখন কীটনাশক ছিটাচ্ছি। কী হবে জানি না।’ তিনি আরও বলেন, এ ইউনিয়নের মানুষমারা, চেংমারী, মিলের বাজারসহ সব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কারেন্ট পোকা দেখা দিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি আরও বাড়বে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীতে এ বছর ১ লাখ ১২ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮৭ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ১৮২ মেট্রিক টন চাল।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আবুল কাশেম আযাদ বলেন, ‘কৃষকেরা যাকে কারেন্ট পোকা বলছেন, সেটি হলো বাদামি গাছফড়িং। অন্ধকারাচ্ছন্ন ও আলো–বাতাস কম থাকে এমন জমিতে এই পোকার আক্রমণ হয়। প্রাথমিক অবস্থায় কীটনাশক ছিটিয়ে এটি দমন করা যায়। এ জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বাদামি গাছফড়িং অল্প বিস্তার লাভ করেছে। তা খুবই কম। যেসব খেতে ধান পেকে যাচ্ছে, আমরা সেগুলো কৃষকদের কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।’