কারাগারের কনডেম সেলে আয়শা ও পাঁচ আসামি

আয়শা সিদ্দিকা
আয়শা সিদ্দিকা

ফাঁসির দণ্ড পাওয়ার পর আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয়জনকে বরগুনা জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। ওই কারাগারের একমাত্র নারী ফাঁসির আসামি হিসেবে নির্জন কনডেম সেলে একাই থাকছেন আয়শা।

বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গত বুধবার প্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামির ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। রায়ে চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এদিকে শিশু আদালতে চলমান ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য নেওয়া শেষ। ৫ অক্টোবর থেকে যুক্তিতর্ক শুরুর দিন ধার্য রয়েছে।

বরগুনা জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেলসুপার) মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল দুপুরে বলেন, রিফাত হত্যার ছয় আসামি ছাড়া কনডেম সেলে আপাতত অন্য কোনো বন্দী নেই। আয়শা একটি কনডেম সেলে একাই থাকছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামিকেও কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, কারাবিধি অনুযায়ী ছয় বন্দীকেই কনডেম সেলে থালা, বাটি ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি আসামিকে কারাগারের পক্ষ থেকে দুই সেট পোশাক দেওয়া হয়েছে।

কারাসূত্র জানায়, কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই খুব বিষণ্ন ও চুপচাপ রয়েছেন তিনি। রাতে সামান্যই খেয়েছেন। ঘুমিয়েছেনও কম। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি বাবার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি খুব কান্নাকাটি করেন।

আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আয়শার সঙ্গে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর কথা বলেছে। খুব কান্নাকাটি করেন আয়শা। একটি নির্জনকক্ষে একাই রাখা হয়েছে তাঁকে।

কারাসূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৪৯ জন নারী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কনডেম সেলে রয়েছেন।

চারজনের খালাস পাওয়ার কারণ

হত্যা মামলা থেকে চারজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। এই চারজন হলেন রাফিউল ইসলাম ওরফে রাব্বি, কামরুল ইসলাম ওরফে সাইমুন, মো. সাগর ও মো. মুসা। এদের মধ্যে মুসা ঘটনার পর থেকেই পলাতক।

খালাস পাওয়া এই চার আসামিরই আইনজীবী ছিলেন মো. শাহজাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে হত্যাকাণ্ডের দিন (২৬ জুন) আসামি রিফাত ফরাজী তাঁকে (কামরুলকে) ফোন দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে কলেজের সামনে যেতে বলেন। কামরুল মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যান এবং রিফাত ফরাজীকে চাবি ও মোটরসাইকেল দিয়ে আসেন। সেই মোটরসাইকেলে রিফাত ফরাজী, তাঁর ছোট ভাই রিশান ফরাজী ও মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পালিয়ে যান। তবে এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর কেউই এ ঘটনার সপক্ষে সাক্ষ্য দেননি। আর এ–সংক্রান্ত কোনো মোটরসাইকেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করতে পারেনি। পাশাপাশি কামরুল যে মোটরসাইকেল চালাতে পারেন বা তাঁর যে মোটরসাইকেল ছিল, এমন কোনো মালিকানা ও চালক সনদও আদালতে দিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। ওই সময় তাঁর ফোনে ৭ সেকেন্ডের যে কল ছিল, সেটা ছিল তাঁর বাবার, রিফাত ফরাজীর নয়। ফলে কামরুল ইসলাম সাইমুন নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়েছেন।

আইনজীবী শাহজাহান বলেন, খালাস পাওয়া সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে কেউ একজন ঘটনার দিন সকাল নয়টায় বরগুনা সরকারি কলেজে যাওয়ার আহ্বান করেছিলেন। সাগর সেই স্ট্যাটাসে ইমোজি দিয়ে লাইক দিয়েছিলেন। শুধু এ কারণে সাগরকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সাগর ঘটনাস্থলে কোনো ভূমিকা পালন করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর রাফিউল ইসলাম রাব্বির বিরুদ্ধে অভিযোগে ছিল, কলেজপড়ুয়া তাঁর এক বন্ধু ওই ঘটনার পর তাঁর আশ্রয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাব্বি এ ঘটনার খবর তখনো জানতেন না। কিন্তু যখন রিফাতকে কোপানোর ঘটনাটি ব্যাপকভাবে রাতে প্রকাশ পায়, তখন ওই আশ্রিত বন্ধু তাঁদের (রাফিউল) বাসা থেকে চলে যান। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। এ ছাড়া পলাতক আসামি মুসার বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। কিন্তু ঘটনার ভিডিওতে মুসার সেখানে উপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণও করতে পারেনি। ফলে মুসাও এ মামলায় খালাস পান।