অবিনাশ বৈদ্য (৫৩) রাজধানীর একটি পোশাক কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ছিলেন। একমাত্র মেয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন সদস্যের পরিবার বেশ সচ্ছলই ছিল। হঠাৎ করোনায় চাকরি হারালেন অবিনাশ, পথে বসার জোগাড় পরিবারটির। তিন বেলা খাবার জোটাতে স্ত্রীকে নিয়ে চায়ের দোকান দিলেন অবিনাশ। সেই দোকানের আয় দিয়েই টেনেটুনে পার করেছেন দেড় বছর।
অবিনাশ বৈদ্যের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায়। তবে চায়ের দোকানটি পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে এলজিইডির সামনে। নাম ‘টি কর্নার’। ছোট্ট সেই চায়ের দোকানে বসে সম্প্রতি অবিনাশ বৈদ্য ও তাঁর স্ত্রী ছবি বৈদ্যর সঙ্গে কথা হয়।
অবিনাশ জানালেন, ঢাকায় তিনি এক পোশাক কারখানায় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ছিলেন। চাকরি ছেড়ে কয়েক বছর আগে নিজে ব্যবসা শুরু করেন। তবে গুনতে হয় লোকসান, ঋণও হয়ে যায়। সেই ঋণ পরিশোধ করতে আবার চাকরি নেন পোশাক কারখানায়। সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে। ঋণ শোধ করতে গিয়ে সঞ্চয় করা হয়নি। তারপরও ভালোই চলছিল। করোনা শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের এপ্রিলে তাঁদের পোশাক কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে তিনি বেকার হয়ে পড়েন।
মেয়েটা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে। হয়তো তখন আর চায়ের দোকান দিতে হবে না।অবিনাশ বৈদ্য
হাতে কোনো পুঁজি বা সঞ্চয় না থাকায় কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না অবিনাশ। অবশেষে চলে যান পিরোজপুরে। পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়াশোনা করার সুবাদে শহরটি সম্পর্কে জানাশোনা ছিল তাঁর। পিরোজপুরে দেড় হাজার টাকায় ভাড়া নেন সড়কের পাশে একটি ছোট ঝুপড়ি। এরপর দুই হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে স্বামী–স্ত্রী মিলে সেখানে শুরু করেন চা বিক্রি। পরে চায়ের সঙ্গে আটার রুটি ও ডাল–ভাজিও বিক্রি শুরু করেন।
অবিনাশ বৈদ্যর স্ত্রী ছবি বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের দোকানটি ঝুপড়ির মতো দেখতে হওয়ায় পথচারীদের খুব একটা নজর কাড়ে না। তবে এখানে এসে কেউ একবার চা খেলে পরে তিনি বারবার চা খেতে আসেন। আমরা স্বামী–স্ত্রী দুজনে মিলে কাজ করি। চা–রুটি বিক্রি করা আয়ে আপাতত চলে যাচ্ছে।’
পিরোজপুরে সরকারি চাকরিজীবী আরিফুল হক বলেন, একদিন হঠাৎ চোখে পড়ল টি কর্নার নামের ছোট দোকানটি। ছোট ঝুপড়ির পরিপাটি পরিবেশ দেখে ভালো লাগল। টি কর্নারের চা একবার যে পান করেছে, তাকে চায়ের নেশায় এখানে বারবার আসতে হবে।
অবিনাশ বৈদ্য বলেন, সুযোগ এলে আবার চাকরি করার ইচ্ছা আছে। তবে যত দিন চাকরির ব্যবস্থা না হয়, তত দিন চায়ের দোকান চালাতে চান। মেয়েটা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে। হয়তো তখন আর চায়ের দোকান দিতে হবে না।