কাদের মির্জার বিরুদ্ধে এবার বিএনপি নেতাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

আবদুল কাদের মির্জা
ফাইল ছবি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান আনছার উল্যাহকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আমেরিকাপ্রবাসী ওবায়দুল হকের কুলখানি অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।

আনছার উল্যাহ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে আজ বিকেলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুরে তিনি বসুরহাট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের (চর কাঁকড়া) আমেরিকাপ্রবাসী ওবায়দুল হকের কুলখানি অনুষ্ঠানে যান। একই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ শাহজাহানেরও আসার কথা ছিল। তিনি সে জন্য বাড়ির একটি ঘরে অপেক্ষা করছিলেন।

আনছার উল্যাহ আরও জানান, বেলা আনুমানিক দুইটার দিকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাও ওই বাড়িতে যান। তিনি তাঁকে দেখে ওই ঘর থেকে সরে গিয়ে বাইরে গিয়ে এক পাশে গিয়ে বসেন। এরপর কাদের মির্জাও ওই ঘরে গিয়ে বসেন। এক-দেড় মিনিট পরই কাদের মির্জা তিনি যেখানে বসেছেন, সেখানে গিয়ে বলেন, ‘এই আপনি তো ভালো করছেন না। আপনি সেখানে (রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে) ভোট চোরের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন তিনি তাঁকে (কাদের মির্জা) গত ইউপি নির্বাচনে তাঁর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ভোট চুরি করে তাঁকে পরাজিত করার কথা বলেন।’

ভোট চুরি নিয়ে বাক্যবিনিময়ের একপর্যায়ে কাদের মির্জা তাঁকে চড়–থাপ্পড় মারেন। থাপ্পড়ে তাঁর চোখ থেকে চশমা ভেঙে ছিটকে মেঝেতে পড়ে। থাপ্পড় মারতে মারতে কাদের মির্জা তাঁর কাঁধে থাকা শাল ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁদের দুজনকে দুই দিকে সরিয়ে নিয়ে যান।
আনছার উল্যাহ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক

বিএনপি নেতা আনছার উল্যাহ অভিযোগ করেন, ভোট চুরি নিয়ে বাক্যবিনিময়ের একপর্যায়ে কাদের মির্জা তাঁকে চড়–থাপ্পড় মারেন। থাপ্পড়ে তাঁর চোখ থেকে চশমা ভেঙে ছিটকে মেঝেতে পড়ে। থাপ্পড় মারতে মারতে কাদের মির্জা তাঁর কাঁধে থাকা শাল ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁদের দুজনকে দুই দিকে সরিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় কাদের মির্জা তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপর তিনি সেখান থেকে তাঁর রামপুর ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন।

সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা আনছার উল্যাহ বলেন, ‘আমি ২০০২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সর্বশেষ বিগত ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু কাদের মির্জার অনুসারী ইকবাল বাহার চৌধুরী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের সব কটিতে কেন্দ্র দখল করে তাঁর নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। সেই ব্যক্তি (ইকবাল বাহার চৌধুরী) এবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী। এখন আমি ভোট চোরের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব না, এটা কি বললেই হবে নাকি?’

বিএনপি নেতা আনছার উল্যাহকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খুদে বার্তার জবাব পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ও কাদের মির্জা ঘোষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি তাঁর জানা নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।

কুলখানি অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতা আনছার উল্যাহকে লাঞ্ছিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের নেতা-কর্মীরা তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার আনছার উল্যাহকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বরাবরই রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী। তা ছাড়া চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। এ অবস্থায় অযথা বিএনপির লোকজনকে নির্বাচনের মাঝে টেনে আনা এবং সেটি করতে গিয়ে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমেল প্রথম আলোকে বলেন, কুলখানি অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যানকে চড়–থাপ্পড় মারার ঘটনা তিনি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।