বরিশালে হামলা-সংঘর্ষ

কাউন্সিলর সাঈদ ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

বরিশালে ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনা নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে
ফাইল ছবি

বরিশাল সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর ও বাস মালিক সমিতির এক নেতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। এই দুজন হলেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাইয়েদ আহমেদ ওরফে মান্না এবং বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিন উদ্দিন ওরফে কালু।

গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদসংলগ্ন বোনের বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী দুই ব্যক্তি কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহমেদকে ধরে নিয়ে যান বলে দাবি তাঁর বড় ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেখ মাসুদ আহমেদের।

তবে শেখ সাইয়েদ আহমেদ ও মমিন উদ্দিনকে ধরে নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানা নেই বলে দাবি করেছেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম।

কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহমেদের বড় ভাই শেখ মাসুদ আহমেদ দাবি করেছেন, তাঁর ছোট ভাই ঢাকার মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় বোনের বাসায় অবস্থান করছিলেন। শুক্রবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সাদা পোশাকে আসা দুই ব্যক্তি নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। তবে তাঁকে কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই জানাননি ওই দুই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায়ও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তারা কেউ তাঁর ভাইকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি বলে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল লতিফ গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক লোক এসেছিলেন কাউন্সিলর সাইয়েদ আহমেদের খোঁজ করতে। তবে আমাদের থানায় এই নামের কেউ গ্রেপ্তার হননি। তা ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে কি না, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশের করা মামলার দুই নম্বর আসামি কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহমেদ। একই মামলার ৪৬ নম্বর আসামি মমিন উদ্দিন। পরিবহননেতা মমিন উদ্দিন বরিশাল নগর যুবলীগের সদস্য।
মমিন উদ্দিনকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসা থেকে সাদা পোশাক পরা লোকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যান বলে দাবি তাঁর শ্যালক আরিফুর রহমানের।

তবে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ ইউএনওর বাসায় হামলা এবং পুলিশের সরকারি কাজে বাধা ও হামলার ঘটনায় করা মামলার ২ নম্বর এবং মমিন উদ্দিন ৪৬ নম্বর আসামি। তবে তাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন তথ্য আমাদের জানা নেই।’

গত বুধবার বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকা এবং সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায় ব্যানার অপসারণ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমান অভিযোগ করেছেন, ‘উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। বুধবার রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেসব ছিঁড়তে আসেন। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাঁদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তাঁরা আমাকে গালিগালাজ করেন। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালান।’

এ ঘটনায় ইউএনও এবং পুলিশ বাদী হয়ে থানায় দুটি মামলা করেছে। দুটি মামলায়ই সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা সবাই দলীয় নেতা-কর্মী।