পিরোজপুরের কাউখালী কাঁচাবাজারে খোলা জায়গায় চটে বসে শাক সবজি বিক্রি করা হয়। প্রতি চটের নির্ধারিত খাজনা ৭ টাকা হলেও ইজারাদার আদায় করছে ১০০ টাকা।
পিরোজপুরের কাউখালী কাঁচাবাজারে খোলা জায়গায় চটে বসে শাক সবজি বিক্রি করা হয়। প্রতি চটের নির্ধারিত খাজনা ৭ টাকা হলেও ইজারাদার আদায় করছে ১০০ টাকা।

কাউখালীর হাটবাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ

মাছবাজারে প্রতি দোকানের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাজনা ১০ টাকা এবং শাক, সবজি ও তরকারি বাজারে দোকানপ্রতি খাজনা ৭ টাকা। কিন্তু মাছবাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খাজনা আদায় করা হচ্ছে। শাক, সবজি ও তরকারি বাজারে প্রতি দোকান থেকে খাজনা নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা।

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদরের হাট ও বাজারে নির্ধারিত খাজনার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ইজারাদারের বিরুদ্ধে মাছ ও কাঁচাবাজারে সরকার–নির্ধারিত ৭ টাকা ও ১০ টাকা খাজনার স্থলে ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। সম্প্রতি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

খোলা জায়গায় চটে বসে আমরা সবজি বিক্রি করি। আমাদের প্রতি চটের (দোকান) জন্য সরকার–নির্ধারিত খাজনা ৭ টাকা। অথচ আদায় করা হয় ১০০ টাকা।
মো. উজ্জ্বল মৃধা, কাউখালী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী

ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, কাউখালী বাজারে ব্যবসায়ীদের সরকার–নির্ধারিত খাজনার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। ইজারাদারের চাহিদামতো খাজনা না দিলে ব্যবসায়ীদের মারধর করা হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অধিক হারে টাকা তোলা হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। মাছবাজারে প্রতি দোকানের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাজনা ১০ টাকা এবং শাক, সবজি ও তরকারি বাজারে দোকানপ্রতি খাজনা ৭ টাকা। কিন্তু মাছবাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খাজনা আদায় করা হচ্ছে। শাক, সবজি ও তরকারি বাজারে প্রতি দোকান থেকে খাজনা নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা।

কাউখালী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. উজ্জ্বল মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘খোলা জায়গায় চটে বসে আমরা সবজি বিক্রি করি। আমাদের প্রতি চটের (দোকান) জন্য সরকার–নির্ধারিত খাজনা ৭ টাকা; অথচ আদায় করা হয় ১০০ টাকা।’

কাউখালী বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. সোহেল বলেন, ‘চটে বসে জায়গার ভাড়া দিয়েই মাছ বিক্রি করি। বেচাকেনার শুরুতেই ইজারাদারের লোকজন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খাজনা নিয়ে নিচ্ছেন। নিয়মিত খাজনা দিলেও ইজারাদার কোনো রসিদ দিচ্ছেন না।’

ইজারাদারের চাহিদামতো খাজনা না দিলে গলাধাক্কা খেতে হয়। মান–সম্মানের ভয়ে আমরা ইজারাদারের সঙ্গে বাহাসে যাই না।
মিল্টন তালুকদার, পাইকারি বিক্রেতা
পিরোজপুরের কাউখালী বাজারের মাছবাজার।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা নেওয়া হচ্ছে। আমরা বাজারে সরকার–নির্ধারিত খাজনার চার্ট টাঙিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু খারাপ ব্যবহার ছাড়া আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি।’

ব্যবসায়ী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, কাউখালী বাজারের খাজনা আদায়ের কোনো নিয়মকানুন নেই। ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। রোদ-বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে কর্দমাক্ত মাটিতে বসে ব্যবসা করতে হয়। কিন্তু খাজনায় কোনো মাফ নেই। সরকার–নির্ধারিত খাজনার চেয়ে ১৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি আদায় করা হয়। এমনকি গ্রামের বাড়ির গাছ বিক্রি করলেও ইজারাদারের লোকজন সেই বাড়ি গিয়ে খাজনা আদায় করেন।

পাইকারি বিক্রেতা মিল্টন তালুকদার বলেন, ‘ইজারাদারের চাহিদামতো খাজনা না দিলে গলাধাক্কা খেতে হয়। মান–সম্মানের ভয়ে আমরা ইজারাদারের সঙ্গে বাহাসে যাই না।’

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খসরু অভিযোগ করে বলেন, হাট–বাজার ইজারা দরপত্রের ৭ নম্বর শর্তাবলিতে উল্লেখ আছে, সরকার অনুমোদিত টোল আদায়ের হার শাক, সবজির দোকানপ্রতি মাত্র সাত টাকা। কিন্তু ইজারাদার বোঝান, শতকরা ৫ টাকা হারে খাজনা দিতে হবে। অথচ ৭ নম্বর শর্তাবলির এটা বিপরীত।

আমি ইজারাদার হিসেবে নতুন। শতকরা ৫ টাকা হারে খাজনা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী একজন খুচরা ব্যবসায়ী প্রতি হাটে কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। সে অনুপাতে খাজনা আদায় হচ্ছে না। শতকরা দুই থেকে আড়াই টাকা নেওয়া হয়।
শাহ আলম, কাউখালী বাজারের ইজারাদার

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউখালী বাজারের ইজারাদার শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ইজারাদার হিসেবে নতুন। শতকরা ৫ টাকা হারে খাজনা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী একজন খুচরা ব্যবসায়ী প্রতি হাটে কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। সে অনুপাতে খাজনা আদায় হচ্ছে না। শতকরা দুই থেকে আড়াই টাকা নেওয়া হয়। বিষয়টি পুরোপুরি বুঝে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে বসে নতুনভাবে খাজনা আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করব।’

হাট–বাজার ইজারা দেওয়ার কর্তৃপক্ষ ইউএনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউখালী ইউএনও মোছা. খালেদা খাতুন অভিযোগ ও অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের সঙ্গে বসেছি। সরকার–নির্ধারিত খাজনার অঙ্ক উল্লেখ করে বাজারে চার্ট টাঙিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। খাজনার রসিদ প্রদানের নিয়ম করার নির্দেশ দিয়েছি। বাজারের পরিবেশ সুন্দর করার জন্য কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। শিগগিরই কাজ শুরু করব।’