দুই পারে স্বজন। হয়তো মা-মেয়ে, ভাই-বোন। মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। বেড়ার ফোকর গলে একে-অন্যকে একটু ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা। কেউ পারছেন, কেউ ব্যর্থ হচ্ছেন। তবু দেখা, কথা তো হলো! এতেই দুই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।
এ দৃশ্য গতকাল সোমবারের, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগরের ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে। প্রতিবছরের মতো এবারও শ্যামাপূজা উপলক্ষে এখানে দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা বসে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েক হাজার মানুষ তাঁদের বহুদিনের স্বজন, আত্মীয়, পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। করেন ভালোবাসার লেনদেন।
সীমান্তে আসা লোকজন জানান, এই সীমান্তের এ পারে বাউরা ইউনিয়ন। ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যের কোচবিহার জেলার কুচলিবাড়ি থানা। দুই এলাকার মাঝখানে ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে বসে মিলনমেলা। প্রতিবছর শ্যামাপূজার পরদিন সকাল আটটার দিকে দুই পারের লোকজন সীমান্তে চলে আসেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে বসে মিলনমেলা। চলে বিকেল পর্যন্ত। এ সময় দুই পারের মানুষজন পরস্পরের সঙ্গে দেখা করেন। কুশলসহ চলে দীর্ঘদিনের আবেগের বিনিময়। এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীও (বিএসএফ) প্রসাদ বিতরণ করে।
নীলফামারীর ডিমলার চাপানী গ্রাম থেকে আসা সীমা রানী (২৮) বলেন, ‘মাসি ও দাদুর সাথে দেখা হয়ে গেল অনেক বছর পর। এটা একটা মায়ার টান। হাতে হাত ছুঁয়ে দিতে না পারলেও একটু চোখজুড়ে দেখতে পেলাম। এটাই তো মনের টান।’
দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, নীলফামারীর ডিমলা থেকে নরেশ্বর চন্দ্র রায় (৫০) গিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি থেকে আসা বড় বোন অঞ্জলি রানী রায়ের (৫৫) সঙ্গে দেখা করতে। পাটগ্রামের জোংড়া ইউনিয়নের বাশঁকাটা গ্রামের দত্ত বালা (৭০) গেছেন ছিটমহল বিনিময়ের সময় ছেড়ে যাওয়া মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। দীর্ঘদিন পর সাক্ষাতে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অনেকে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে একে অন্যকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন। কেউ বেড়ার ফাঁক ও ওপর দিয়ে মিষ্টান্ন, খাবার, কাপড়সহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী আদান-প্রদান করেন। শেষ সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশ মুহূর্তে কান্নাকাটিতে পরিণত হয়।
ডিমলার বড়খাতা গ্রামের পবিত্র নাথ রায় (৫৫) ও শ্যামল চন্দ্র রায় (৫০) বলেন, তাঁরা প্রতিবছর অপেক্ষা করেন এ দিনটির জন্য। যদিও স্বজনদের কাছে পান না, তারপরও অনেক দিন পর সামনাসামনি হতে পারেন। দূর থেকে হলেও কথা বলতে পারেন।