বাঁধাকপির দাম কেজিপ্রতি তিন–চার টাকা। খুচরা বাজার থেকে অনেকে বেশি পরিমাণ বাঁধাকপি কিনে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শোভরাজপুর গ্রামের লাভলু মিয়া দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছিলেন। গত সোমবার তাঁর খেত থেকে ফড়িয়াদের বাঁধাকপি কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র সাত হাজার টাকার বাঁধাকপি তুলে ফড়িয়ারা চলে যায়। পরে বাকি বাঁধাকপি গ্রামের হাটে পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয় তাঁকে।
উপজেলার বড় বাজার আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে লাভলু মিয়া বলছিলেন, দাম কম থাকায় অনেকে গরু–ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য ১০–১২ কেজি করে বাঁধাকপি কিনছেন। কত কষ্টে খেতে সবজি ফলাতে হলো, এখন তা গরু-ছাগলে খাচ্ছে।
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ছোট এই জেলায় সবজির ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে সবজি অন্য জেলাগুলোতেও যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায় বিবেচনায় সবজির ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা নামমাত্র দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, জেলায় আলু ছাড়া কাঁচা পণ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাজারে রেখে পচানোর চেয়ে কম দামে বিক্রি করাই ভালো মনে করছেন কৃষকেরা।
গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক বিপ্লব হোসেন ও মুরাদ আলী বলেন, বৃষ্টি আর পাতাপোড়া রোগে অনেকের সবজি নষ্ট হয়ে যায়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাষিরা ধারদেনা করে আবার চাষ করেন। এবার সবজিও খুব ভালো উৎপন্ন হয়। কিন্তু বাজারে এখন দাম মিলছে না।
শুধু বাঁধাকপি নয়, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। বিক্রেতা ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার খেত থেকে তুলে আনা এক কেজি মুলা বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন তিন টাকা। এক সপ্তাহ আগে হাটে পাইকারি পর্যায়ে মুলার দাম ছিল ১২ টাকা। গড়ে দেড় কেজি ওজনের বাঁধাকপি বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন তিন–চার টাকা। এক সপ্তাহ আগে ১ কেজি ওজনের বাঁধাকপির পাইকারি দাম ছিল ২৫ টাকা। এ ছাড়া এক কেজি ওজনের একটি ফুলকপি বিক্রি করে কৃষক দাম পেয়েছেন পাঁচ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এর দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকা ছিল।
শনিবার মেহেরপুরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ আগের ৫০ টাকার শিম ১০ টাকায়, ৩০ টাকার বেগুন ১০, ১০০ টাকার কাঁচা মরিচ ৬০, ৩৫ টাকার পটোল ২০, ৭০ টাকার গাজর ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম কমেছে পালংশাক, ধনেপাতা, মিষ্টিকুমড়া ও টমেটোর। তবে বাজারে সম্প্রতি আগাম জাতের আলুর সরবরাহ বেড়েছে। দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকার ওপরে।
মেহেরপুরের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন স্বল্প সময়ের মধ্যেই জেলাতে একটি সবজি সংরক্ষণাগার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি তৈরি হলে চাষিদের এতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না।স্বপন কুমার খাঁ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক
মেহেরপুরের অন্যতম রপ্তানির মোকাম হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলার কায়েমকাট মোড়। এই মোকাম থেকে দেশের নানা প্রান্তে শাকসবজি ট্রাকে বোঝাই করে রপ্তানি হয়। গতকাল শনিবার এই মোকামের সামনে শোলমারি গ্রামের চাষি হারেজ মণ্ডল মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন। সবজির ভরা মৌসুমে তিন–চার টাকা কেজিতে বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন। অথচ প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে কপি উৎপাদন করেছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছর মধ্য অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
জেলার পাইকারি বাজার কমিটির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, সবজি সংরক্ষণ করা গেলে চাষিরা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পেতেন। সরকারের কাছে সংরক্ষণাগারের দাবিও দীর্ঘদিনের। কিন্তু এটি নির্মিত হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন স্বল্প সময়ের মধ্যেই জেলাতে একটি সবজি সংরক্ষণাগার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি তৈরি হলে চাষিদের এতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না।