শরীয়তপুর জেলা পুলিশে ১ হাজার ১০০ সদস্য কর্মরত। এর মধ্যে ১৭৭ জন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে ১৬৩ জন সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরেছেন। বেশির ভাগই কর্মস্থল পুলিশ লাইনসের ব্যারাকে আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন। যাঁরা সুস্থ হয়েছেন, তাঁরা এখন আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্লাজমা ও রক্ত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।
ইতিমধ্যে ঢাকার রাজারবাগে অবস্থিত কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে জেলা পুলিশে কর্মরত ২৬ পুলিশ সদস্য প্লাজমা দিয়ে এসেছেন। সুস্থ হওয়া বাকি পুলিশ সদস্যরা পর্যায়ক্রমে প্লাজমা দেবেন বলে জানা গেছে।
শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরে ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য কর্মরত, যাঁরা সাতটি থানা, তিনটি ফাঁড়ি, দুটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, পুলিশ লাইনস, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগে, বিভিন্ন কর্মকর্তার বাড়ি, কার্যালয়, সরকারি বিভিন্ন কার্যালয় ও স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। সেখানে কাজ করতে গিয়ে গত পাঁচ মাসে ১৭৭ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে পুলিশ লাইনসে আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত কনস্টেবল মো. হাসান শেখ দুই মাস আগে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি কর্মস্থলে আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তিনি প্লাজমা দিয়েছেন।
মো. হাসান শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে আমাদের কাজ করতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দায়িত্ব পালন করছিলাম। তারপরও আক্রান্ত হয়েছি। প্রথম দিকে একটু ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু মনে সাহস রেখে রোগ মোকাবিলা করে আবারও কাজে যোগ দিয়েছি, আগের মতোই মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। এসপি স্যারের নির্দেশে ঢাকায় গিয়ে প্লাজমা দিয়েছি। করোনাভাইরাস মহামারিতে মানবকল্যাণের সব কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে ভালো লাগছে।’
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানায় এক বছর ধরে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান। তিনি গত ২০ জুলাই আক্রান্ত হন। তবে তাঁর কোনো উপসর্গ ছিল না। এখন তিনি সুস্থ। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে শরীরের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে প্লাজমা দিয়েছেন।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই পুলিশ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। কোয়ারেন্টিন ও লকডাউন বাস্তবায়ন, খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া, মৃত ব্যক্তিদের দাফন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে পুলিশকে। এসব কাজ করতে গিয়ে জেলায় কর্মরত ১৭৭ পুলিশ সদস্য কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন।
এস এম আশরাফুজ্জামান বলেন, সুস্থ হয়ে ওঠা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৭০ জনকে রাজারবাগে পাঠানো হয়েছিল প্লাজমা দেওয়ার জন্য। তাঁদের মধ্যে ২৬ জনের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ওই ২৬ জনের প্লাজমা নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সুস্থ হয়ে ওঠা অন্য পুলিশ সদস্যরাও প্লাজমা দেবেন।