বগুড়ায় করোনাকালে স্বামী ও শিক্ষকতার চাকরি হারানো মায়িশা ফারাহর (২৪) প্রতি মানবিক ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই। বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী মায়িশা ও তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া ছাড়াও সব রকমের সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাৎক্ষণিক অর্থসহায়তা দিয়েছেন অনেক মানুষ।
আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোর নারীমঞ্চ পাতায় মায়িশা ফারাহকে নিয়ে ‘করোনায় স্বামী হারিয়ে শিক্ষক মায়িশা এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
ওই প্রতিবেদন নজরে আসে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর। তিনি আজ দুপুরে মায়িশা ফারাহ, তাঁর বৃদ্ধ বাবা রোস্তম আলী (৮২) ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মা নেকনূর খাতুনকে (৭৫) তাঁর সম্মেলনকক্ষে ডাকেন। সেখানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় পরিবারের সদস্যদের হাতে মানবিক সহায়তা হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, একজন মায়িশা জীবনযুদ্ধে বারবার বিভিন্নভাবে সমস্যায় পড়েছেন, বিপর্যস্ত হয়েছেন। কিন্ত পরাজয় বরণ করেননি। জেলা পুলিশ মনে করে, পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব। মায়িশার একটি সম্মানজনক চাকরি দরকার। তাঁর যে শিক্ষাগত যোগ্যতা, সেই অনুযায়ী পুলিশে নেওয়া সম্ভব হলে তা চেষ্টা করা হবে। তা না হলে তাঁকে সম্মানজনক জীবনযাপনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্য কোথাও চাকরি ছাড়াও যেভাবে সম্ভব, সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বগুড়ার রাজাবাজার আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ মায়িশার হাতে খাদ্যসহায়তা ছাড়াও তাঁর শিশুকন্যাদের দুধ কেনার জন্য নগদ অর্থসহায়তা তুলে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানী ঢাকার এক ব্যক্তি এক লাখ টাকার অর্থসহায়তার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া রাজধানীর একজন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক ১০ হাজার টাকা, ফ্রেশ গ্রুপ ১০ হাজার টাকা, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষক আবদুল আজিজ ৫ হাজার টাকা, বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির কর্মীদের পক্ষ থেকে ১৩ হাজার টাকা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩ ব্যক্তি ১৩ হাজার টাকা, আরেক ব্যক্তি মুঠোফোন উপহার পাঠিয়েছেন। চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’ এর পক্ষ থেকে তাকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
স্নাতক পাসের পর বগুড়ার একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতার চাকরি পান মায়িশা। গত বছর মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলে চাকরি হারান। গত ডিসেম্বরে করোনায় স্বামী মতিউর রহমান (২৯) মারা যান। এমন অবস্থায় পাঁচ ও আড়াই বছর বয়সী দুই মেয়ে এবং বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
শিশুসন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে ফুটপাতে মানুষের কাছে হাত পেতেছেন। একপর্যায়ে গত মার্চে বগুড়া শহরের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে অনলাইনে পণ্য সরবরাহের কাজ নেন। হেঁটে হেঁটেই মানুষের বাসাবাড়িতে পণ্য সরবরাহ করে দিন শেষে গড়ে ১৫০ টাকা উপার্জন হতো। কিন্তু রমজান মাসে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় অনলাইনে বিক্রিতে মন্দা কারণে কাজ হারাতে হয়। সবশেষে বগুড়ার আকবরিয়া লিমিটেডে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ জোটে। মায়িশা পরিবার নিয়ে বগুড়া শহরের নাটাইপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।