কিশোরগঞ্জের ভৈরবে করোনা সংক্রমণে গত বছরের ১৭ মে মারা যান এক নারী। তিনি ছিলেন উপজেলায় করোনায় মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তি। সেদিন দাফনকাজে অংশ নেওয়ার লোক জোগাড় করা যাচ্ছিল না। পরে এমন পরিস্থিতি এড়াতে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। দলের সদস্য ২৫ জন। তাঁরা করোনায় মারা যাওয়া ৩৬ জনের লাশ দাফন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত দলের কোনো স্বেচ্ছাসেবীর করোনা শনাক্ত হয়নি। এ দলের পাঁচ সদস্য নারী।
স্বেচ্ছাসেবী দলটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফনের কাজে যেসব স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত, তাঁদের কেউ এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি। এতে বেশ উজ্জীবিত দলের সদস্যরা। স্বস্তিতে আছে করোনা প্রতিরোধ কমিটি।
রোববার স্বেচ্ছাসেবী দলের বেশ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ঘিরে মানবিক ও পারিবারিক বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষদর্শী তাঁরা। করোনাকালে আপন আর পরের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখা যায় না।
স্বেচ্ছাসেবী দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনাস মাহমুদ। পেশায় তিনি ইউনানি চিকিৎসক। তিনি বলেন, এমনও হয়েছে যে করোনায় মৃত ব্যক্তির শেষ গোসলও বাড়ির সীমানায় করতে দেয়নি অনেক পরিবার। হাসপাতাল থেকে লাশ আনার লোক পাওয়া যায় না। ৩৬টি লাশ দাফন করেছেন তাঁরা। এখনো তাঁদের দলের সব সদস্য সুস্থ আছেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনকাজে অংশ নিলে সমস্যা নেই, অন্তত তাঁদের কার্যক্রমে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী দলের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দাফন শেষে আমরা কবরস্থানেই পিপিই পুড়িয়ে ফেলি। স্যানিটাইজার ব্যবহার করে শরীর জীবাণুমুক্ত করি। ভালো করে গোসল করে তবেই ঘরে ফিরি।’
ভৈরব উপজেলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৫১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৪০ জন।
ইকবাল ফারাবি, সালমান আনোয়ার, আহমদ উল্লাহ, মো. জোবায়ের, মনসুর মিয়া, খায়রুল ইসলাম, স্বপন মিয়া, এমদাদ উল্লাহ স্বেচ্ছাসেবী দলের সদস্য। তাঁরা জানালেন, লোকজন শুধু করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে দূর থাকেন, তা নয়; তাঁরা যেহেতু লাশ দাফনের কাজ করেন, তাই তাঁদের কাছ থেকেও অনেক মানুষ দূরে থাকেন।
ভৈরব উপজেলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৫১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৪০ জন।
উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. খুরশীদ আলম বলেন, দলের প্রত্যেক সদস্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই দাফনকাজে অংশ নেন। সে কারণেই হয়তো তাঁরা সুস্থ আছেন।
স্বেচ্ছাসেবী ২৫ সদস্যের দলের কেউ করোনায় আক্রান্ত না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভৈরব উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জীবন যাপন করলে জীবনকে তুলনামূলক নিরাপদে রাখা যায়।