দুই দিন ধরে ঠাণ্ডা–জ্বরে ভুগছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জোগীরকোফা গ্রামের জাবের উদ্দিনের মেয়ে নিপা (১২) ও সামিয়া (৯)। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা। কুমুদিনী হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদে এসেছেন সেবা দিতে, এমন খবরে দুই বোনকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই বোন স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে কুমুদিনী হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে। চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্র দেন।
দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী হাসপাতালের মাধ্যমে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা মির্জাপুরে শুরু করেছে কমিউনিটি পর্যায়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা। টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের মাধ্যমে গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এই সেবা।
এতে কুমুদিনী হাসপাতালের কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য সহকারীদের ছয় সদস্যের একটি দল মাঠপর্যায়ে থাকছেন। তাঁদের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে অনলাইনে যুক্ত হচ্ছেন ছয়জনের একটি চিকিৎসক দল।
গত শুক্রবার বিকেলে কুমুদিনী হাসপাতালের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল হালিম বলেন, হাসপাতালটিতে আগে ৭৫০ শয্যা থাকলেও বর্তমানে ১ হাজার ৫০ শয্যা আছে। করোনা পরিস্থিতির আগে এখানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার রোগী বহির্বিভাগে আর অন্তর্বিভাগে প্রায় ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিতেন। তাঁরা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা পেতেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা বিনা মূল্যে থাকা ও খাওয়ার সুযোগ পান। রোগীদের অধিকাংশই দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে সাধারণ রোগীরা সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে আসতে ভয় পাচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে আসতে পারছেন না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দেবে কুমুদিনী হাসপাতাল।
লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা গোড়াকী গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, কয়েক দিন ধরে তাঁর কোমরে ব্যথা। কিন্তু করোনার ভয়ে হাসপাতালে যেতে পারছেন না। বাড়ির কাছে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে শুনে তিনি এসেছেন। ডাক্তারের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পরিবারের কেউ বাজার থেকে ওষুধ আনবে। আবদুস সামাদ নামের এক রোগী বলেন, তাঁর চর্মরোগ হয়েছে। করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে যেতে পারছিলেন না। ক্যাম্পেইনের ফলে তাঁর খুবই উপকার হয়েছে।
কুমুদিনী হাসপাতালের প্রকল্প কর্মকর্তা আবদুল হাই ও জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা শুভ দাস বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রতিদিন একটি এলাকায় কমপক্ষে ৫০ জন রোগীকে সেবা দেবেন। প্রয়োজনে একই স্থানে দুই দিন ক্যাম্পেইন করা হবে।
হাসপাতালের আইটি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের জন্য ক্যাম্পেইন স্থলে ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। এ জন্য সেবা কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যে কুমুদিনীর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর ফলে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ সেবা পাচ্ছেন। ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের লোকজন এখানে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক অনিমেষ ভৌমিক বলেন, হাসপাতালটিতে বর্তমানে বহির্বিভাগে গড়ে প্রতি দিন ২৩০ থেকে ২৬০ জন রোগী আসছেন। শনিবার হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগে ১৩০ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখানে ৫১ জন চিকিৎসক ও ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগের জন্য ২৯ জন চিকিৎসক আছেন, যারা জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসাসেবা দিতে আসছেন।