চাঁদপুর ও আশপাশের কয়েকটি জেলায় গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ছে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ দিনে এসব এলাকার ১ হাজার ২৭৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) চাঁদপুরের মতলব হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই হিসাব মতে, প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে ১২৭ জনের বেশি।
আইসিডিডিআরবি মতলব হাসপাতালের কার্যালয় সূত্র জানায়, ১০ দিনে ভর্তি হওয়া চাঁদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ আরও কয়েকটি জেলার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মধ্যে চাঁদপুর জেলার রয়েছে ৪৪৩ জন। আক্রান্তের এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের প্রায় দ্বিগুণ। এই হিসাবের বাইরে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আরও ভর্তি হয়েছে ৫০ জন।
এদিকে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৫ এপ্রিল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ দিনে চাঁদপুরের ৮টি উপজেলায় মোট ২২৫ জন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমিত হয়েছেন।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মধ্যে চাঁদপুর জেলার রয়েছে ৪৪৩ জন। আক্রান্তের এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের প্রায় দ্বিগুণ।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল সূত্রটি আরও জানায়, গত ১০ দিনে হাসপাতালটিতে চাঁদপুর সদরের ১২২ জন, জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪৮, হাইমচরের ১৪, হাজীগঞ্জের ৪৩, কচুয়ার ৮২, মতলব উত্তরের ৩৪, মতলব দক্ষিণের ৭৮ ও শাহরাস্তির ২২ জন ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার ৪১০ জন, লক্ষ্মীপুরের ৩৫৬ জন, নোয়াখালীর ৪২ জন, শরিয়তপুরের ১২ জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৮৯ জন পুরুষ ও ৫৮৪ জন নারী।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীদের ভিড়। বহির্বিভাগেও চিকিৎসা নিচ্ছে কিছু রোগী। রোগীদের চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসক ও নার্সরা ব্যস্ত। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের চার বছরের শিশু মো. জুনায়েদ হোসেন বলে, ‘গত মঙ্গলবার সকালে পাতলা পায়খানা ও বমি লইয়া এনো ভর্তি অইছি। হেরা স্যালাইন ও ওষুধ খাইতে দিছে। এহন কিছুটা ভালা লাগে।’
তীব্র গরমের কারণে এবং অবিশুদ্ধ পানি পান ও খাবার গ্রহণের ফলে এত লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীদের ২৫ শতাংশই মাঝারি ও তীব্র পানিশূন্যতার, যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি।মো. আল ফজল খান, স্টেশন প্রধান, আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতাল
আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতালের স্টেশন প্রধান মো. আল ফজল খান বলেন, তীব্র গরমের কারণে এবং অবিশুদ্ধ পানি পান ও খাবার গ্রহণের ফলে এত লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীদের ২৫ শতাংশই মাঝারি ও তীব্র পানিশূন্যতার, যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি। আক্রান্ত শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। সাত মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের খাওয়ার স্যালাইন, বেবি-জিংক, মায়ের বুকের দুধ, সুজি ও খিচুড়ি খেতে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য রোগীকে খাবার স্যালাইন, স্বাভাবিক খাবার এবং ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেওয়া হচ্ছে। বারবার পানির মতো পাতলা পায়খানা ও ঘন ঘন বমি হলে রোগীকে দ্রুত কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
মো. আল ফজল খান আরও বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও তাঁর হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা ডায়রিয়া রোগীদের নিরলস চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও সরঞ্জামাদি রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।