রংপুরে ২০০৭ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম।
করোনার শঙ্কা কাটিয়ে উঠে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক। বিদ্যালয়গুলোকে ঘিরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির ঝিমিয়ে পড়া কার্যক্রম আবারও গতি ফিরে পেয়েছে। ধীরে ধীরে লাইব্রেরি থেকে বই নেওয়া পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘আলো আমার, আলো ওগো, আলো ভুবন ভরা’ রবীন্দ্রসংগীতটি বাজিয়ে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়িটি বেলা একটার দিকে রংপুর জিলা স্কুলের প্রাঙ্গণে গিয়ে দাঁড়ায়। এ সময় ১০-১২ ছাত্র গাড়িটিকে ঘিরে দাঁড়ায়। তারা সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্র। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান আশরাফ বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই এই লাইব্রেরির বই পড়ে আসছি। সব ধরনের বই পড়ে থাকি। মুক্তিযুদ্ধের বইও পড়ছি।’
এর আগে গাড়িটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের পাশে দাঁড়ায়। এরপর একজন-দুজন করে শিক্ষকদের কয়েকজন শিশুসন্তান সেখানে ছুটে আসে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আসেন বই নিতে। সম্প্রীতি তরী নামের প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বই নেড়েচেড়ে দেখছিল। সে বলে, ‘নতুন সদস্য হয়েছি। এক সপ্তাহ পর বই ফেরত দিয়ে আরেকটি নতুন বই নিচ্ছি।’
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক আপেল মাহমুদ বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় করোনার কারণে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি আসেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সন্তানকে সদস্য করিয়েছি।’
সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী জারিন তাসনিম বলে, অনেক দিন স্কুল বন্ধ ছিল। স্কুল খোলায় আবার পুরোদমে পড়ালেখা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিও চলে এসেছে। তাই আবার বই নেওয়া শুরু করেছে।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সূত্রে জানা যায়, রংপুরে ২০০৭ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছর পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম। শুরুতে ২৪টি স্থানে গাড়ি থামলেও তা এখন বেড়ে ৪৯টি স্থানে থামে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও এ গাড়ি থামে। রংপুর নগরে লাইব্রেরির পাঠকসংখ্যা ৬ হাজার ৮৭৩ জন। বর্তমানে এর অর্ধেক পাঠক নিয়মিত বই নেয়। নিয়মিত পাঠকদের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। বই পড়ার জন্য প্রতি মাসে মাত্র ১০ টাকা ফি দিতে হয়। বই পাঠে চার ক্যাটাগরির সদস্য রয়েছে। এসব ক্যাটাগরি হলো সাধারণ সদস্য, বিশেষ সদস্য, অগ্রবর্তী সদস্য ও বিশেষ অগ্রবর্তী সদস্য। তবে ফেরতযোগ্য কিছু নিরাপত্তা অর্থ জমা দিতে হয়।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা আবু আজাদ রহমান বলেন, করোনার সময় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বন্ধ থাকলেও অনেকের চাহিদা থাকায় বাড়িতেও বই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন স্কুল-কলেজ খুলেছে। শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে ফিরে এসেছে। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির বই পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ধীরে ধীরে বইপাঠের সংখ্যা বাড়বে।