কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ছাত্র খাইরুল আলম। পড়াশোনার পাশাপাশি করোনাকালে নিজের জমিতে বারী-৪ টমেটো চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন। ওই টমেটো বছরের ৯ মাস বিক্রি করেন। গত বছর খরচের দ্বিগুণের বেশি বিক্রি হয়েছে। এ বছর আরও বেশি টাকায় বিক্রির আশা করছেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন, তাঁর চাষ করা টমেটো একসময় বিদেশে রপ্তানি হবে।
খাইরুল ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ভোলদীঘি কামিল মাদ্রাসার কামিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
খাইরুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজের গ্রাম নারায়ণপুরে পাহাড়ের ঢালুতে গত বছর আধুনিক পদ্ধতিতে পলি সেট নির্মাণ করে বারী-৪ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। এসব টমেটো বছরের ৯ মাস ফলন দেয়। জমি প্রস্তুত, সার, ওষুধ ও পরিচর্যা বাবদ তার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। ওই টমেটো তিনি বিক্রি করেন প্রায় পাঁচ লাখ টাকায়। এ বছর তিনি দেড় একর জমিতে পলি সেট নির্মাণ করে বারী-৪ টমেটো চাষ করেছেন। জমি প্রস্তুত, সার, ওষুধ ও পরিচর্যা বাবদ তাঁর প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
খাইরুল আলম জানালেন, ভালো ফলনের আশায় তিনি দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেন ওই জমিতে। চলতি মৌসুমে তিনি এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে টমেটো বিক্রি করেছেন। গত দেড় মাসে তিনি প্রায় পাঁচ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন, কোনো রোগবালাইয়ের আক্রমণ না হলে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষ করা টমেটো আরও ছয় থেকে সাত মাস বিক্রি করতে পারবেন। সব মিলিয়ে এ বছর প্রায় ২০ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করার আশা তাঁর। তিনি পাইকারি দরে টমেটো বিক্রি করেন না। টমেটো বিক্রি করার জন্য তিনি দুজন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁরা হাটের দিন হাটে নিয়ে টমেটো বিক্রি করেন।
খাইরুল বলেন, টমেটো চাষে সফলতা আছে। আবার ক্ষতির আশঙ্কাও আছে। সঠিক বীজ না হলে খরচ হয় ঠিকই, কিন্তু ফলন ভালো হয় না। এতে করে কৃষককে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। কৃষি অধিদপ্তরে তিনি ভালো মানের বীজের জন্য যোগাযোগ করেছেন।
নারায়ণপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এত অল্প সময়ে খাইরুল আলম টমেটো চাষ করে যে সফলতা পেয়েছেন, তা আমাদের কাছে এখন অনুকরণীয়। তাঁর টমেটো চাষ দেখে আমারাও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। তাঁর মতো আমরাও টমেটো চাষ করব আশা করছি।’
একই গ্রামের নাঈম বলেন, ‘আমরা তো এই টমেটো বাজার থেকে কিনে খাই। তবে এই এলাকায় এর আগে কাউকে চাষ করতে দেখিনি। তাই খাইরুল আলমের জমি দেখতে এসেছি। দেখে বেশ ভালো লেগেছে।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হাসান বলেন, বর্তমানে গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে টমেটোর ভালো চাহিদা আছে। এই জাতের টমেটোর গুণাগুণও ভালো। খাইরুলের জমি পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের বলেছেন। খাইরুলের সাফল্য দেখে ওই এলাকার অনেকেই এখন বারী-৪ টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।