মানবতার বাজারে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ করছেন করোনাযোদ্ধা মনীষা
মানবতার বাজারে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ করছেন করোনাযোদ্ধা মনীষা

করোনাকালে অসহায় মানুষের ত্রাতা একজন মনীষা

সে এক ভীষণ ভয়ের সময়। চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যুর খবরগুলো যখন এ দেশের মানুষ পাচ্ছিল, সঙ্গে জানছিল করোনা ক্রমে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, এ দেশেও করোনা আসবে কি না, সে আতঙ্কে তখন দিন কাটছে। ৮ মার্চ যখন এ দেশেই প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা হলো, মানুষের সে সময়টার আতঙ্কের সঙ্গে শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন আতঙ্কেরই তুলনা চলে। জাতির বড় দুটি ক্রান্তিকালের সূচনাই যে মার্চে, এ–ও এক কাকতালীয়ই বটে।

বরিশাল বিভাগে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়। আর বরিশাল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। সারা দেশের মতো বরিশালের মানুষও তখন দিগ্ভ্রান্ত। এ ধরনের বৈশ্বিক মহামারিতে কী করতে হবে, সে অভিজ্ঞতা আগে ছিল না বললেই চলে। ফলে প্রথম দিকের আতঙ্ক আর লকডাউনে শ্রমজীবী, দরিদ্র মানুষগুলো সবচেয়ে প্রান্তিক হয়ে উঠেছিল। করোনা রোগী, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে যখন সবার অজানা আতঙ্ক, সুস্থ সচ্ছল মানুষ যখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে পরিবারের গণ্ডিতে, তখন মাঠে নামেন মনীষা। পুরো নাম মনীষা চক্রবর্তী। গত বছরের মার্চ থেকে আজও নিরলস আর অবিচল দৃঢ়তায় করোনা রোগী থেকে শুরু করে মানবেতর জীবন কাটানো মানুষদের সহায়তা করে চলেছেন তিনি।

চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তী

বরিশালের মানুষের কাছে মনীষার পরিচিতি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের নেতা হিসেবে। কিন্তু করোনাকালে তিনি আবির্ভূত যেন অসহায় মানুষের ত্রাতা হিসেবে। শুরুতে মানুষ যখন চিকিৎসা, খাদ্যসহ নানা সংকটে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন তিনি সতীর্থদের নিয়ে ভয়-শঙ্কা উপেক্ষা করে বিপন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটতে থাকেন কখনো অক্সিজেন নিয়ে, কখনো অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার কাজে। আবার কখনো লকডাউনে খাবার সংকটে পড়া পরিবারগুলোর জন্য ছুটে যান রান্না করা খাবার নিয়ে।

করোনাকালে জীবিকা হারানো মানুষের জন্য বিনা মূল্যের বাজার-সওদা নিয়ে তিনি খুলেছেন মানবতার বাজার। সেখান থেকে বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন চাল, ডালসহ সব নিত্যপণ্য। তারপর করোনা সচেতনতা কার্যক্রম থেকে শুরু করে সংকটে পড়া পরিবারগুলোতে শিশুখাদ্য জোগান, লকডাউন বাসায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিনা মূল্যে মেডিকেল স্ক্রিনিং, বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, বিনা মূল্যে অক্সিজেন ব্যাংক জোগান, করোনা দুর্যোগে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বীজ ও ফলের চারা বিতরণ—কোথায় ছিলেন না তিনি! পাশাপাশি অতিমারিকালে আসা মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মতো প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোতেও তিনি ও তাঁর সতীর্থরা উপহার-খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছিলেন মানুষের পাশে।

এসব কারণেই মেহনতি মানুষের নেতা মনীষা এখন হয়ে উঠেছেন বিপন্ন মানুষের ত্রাতা। এসব মহতী কাজে মনীষার পেছনে ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদের একঝাঁক তরুণ নেতা-কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক।

শৈশব থেকেই সংগ্রাম আর সেবার ব্রত

মনীষা অর্থ বুদ্ধি–প্রজ্ঞা। এই নামই যেন তাঁর পরিচয়। ছোটবেলা থেকেই বিতর্ক, খেলাধুলা, বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বরিশালে পরিচিতি পান মেধাবী মনীষা। বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন অমৃত লাল দে কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ফের জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে।

মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ৩৪তম বিসিএসে সহকারী সার্জন হিসেবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন মনীষা। কিন্তু চাকরিতে না গিয়ে তিনি মেহনতি মানুষের রাজনীতিতে নিজেকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যক্তিজীবনে ইচ্ছা করলে তিনি নির্বিঘ্ন জীবন পার করে দিতে পারতেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক মনীষার ব্যক্তিজীবনের ত্যাগ, অদম্য সংগ্রাম বরিশালের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত।

করোনাযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে মনীষা চক্রবর্তী

কিন্তু এখনকার দিনে এই ত্যাগ আর ভোগবাদী-বিলাসী জীবনের প্রতি এই নির্লিপ্ততা কীভাবে এল তরুণ মনীষার? উত্তর খুঁজতে যেতে হয় তাঁর ঠিকুজি-কুলুজিতে। প্রগতিশীল পরিবারে জন্ম নেওয়া মনীষার পিতামহ বিশিষ্ট আইনজীবী শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রাজাকাররা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মনীষার বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী ৯ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। প্রগতিশীল পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা মনীষার শৈশব অতিবাহিত হয় ফুফা বিশিষ্ট প্রকৃতিবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মার সংস্পর্শে।

মনীষা বর্তমানে বাসদের বরিশাল জেলার সদস্যসচিব। বাসদের নেতৃত্ব পাওয়ার পর শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি বরিশাল নগরের বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা আদায়ের সংগ্রামে প্রতিনিয়ত মাঠে থেকে একজন সংগ্রামী রাজনৈতিক যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। এ জন্য তাঁকে কারাবাসও করতে হয়েছে।

করোনাকালে ‘এক মুঠো চাল’ কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন মনীষা

২০১৮ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন মনীষা। ভোটের দিন অনিয়মের প্রতিবাদে দুপুরে নির্বাচনে বর্জন করেন তিনি। তবে ভোট শেষ হলেও মাঠ ছাড়েননি তিনি। নানা রকম কার্যক্রমের মাধ্যমে মনীষা বরিশালবাসীর কাছে ইতিবাচক আলোচনার কেন্দ্রে আছেন। বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা নিয়ে, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে। লড়ে যাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ ও তরুণদের নিয়ে।

করোনাযোদ্ধা মনীষার ছুটে চলা

করোনাকালের শুরুতে মনীষা মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের পাশাপাশি শুরু করেন চিকিৎসা, সচেতনতা, খাদ্যসহায়তা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহায়তাসহ বহুমুখী কাজ। লকডাউন ও লকডাউন–পরবর্তীকালে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রথমে ১০টি ইজিবাইককে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করেন এবং ৭ জুলাই থেকে পূর্ণাঙ্গ একটি অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করে রোগী পরিবহন করেন। এ কর্মসূচির নাম দেন ‘ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস’।

‘নির্ভয়’, ‘আস্থা’, ‘নির্ভীক’ ইত্যাদি নামে বরিশালজুড়ে গরিব রোগীদের সেবা দেয় মনীষাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলো। এই কাজ করার জন্য গঠন করেন ২০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। এ পর্যন্ত ৪৮৫ জন রোগীকে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন।

‘মানবতার ঈদ উৎসব’ কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছেন মনীষা চক্রবর্তী

২৮ জুন থেকে শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সহায়তার জন্য খোলেন অক্সিজেন ব্যাংক। এই কর্মসূচির নাম ‘ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংক’। ১৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬০টি অক্সিমিটার দিয়ে এই সার্ভিস চালু করেন তাঁরা। এ পর্যন্ত তাঁরা ১১৫ জন রোগীকে বাসায় গিয়ে বিনা মূল্যে অক্সিজেন–সেবা দেন। এ কাজে সাতজন স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

এ ছাড়া ৮ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে মে মাসজুড়ে বরিশালের বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে দুটি দলে গণহারে মানুষের স্ক্রিনিং করার কার্যক্রম চালান তাঁরা। এতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ মানুষের স্ক্রিনিং, ডেটা সংগ্রহ করে তাঁদের পরামর্শ দেন চিকিৎসক মনীষা ও তাঁর দল।

গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে আলোচনা সভা, বস্তিগুলোতে গিয়ে মানুষদের সচেতন করার কাজ শুরু করেন মনীষা। নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে তাঁরা স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। মার্চ মাসের শুরুতে করোনা সচেতনতা তৈরিতে ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণ করেন। ১৫ মার্চ থেকে নগরের বস্তিবাসী, স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ১৭ হাজার বোতল জীবাণুনাশক তৈরি করে বিতরণ শুরু করেন। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে বিতরণ করেন ২৫ হাজার মাস্ক।

শিশুখাদ্য ও মানবতার কৃষি কার্যক্রমে বীজ বিতরণ করছেন মনীষা চক্রবর্তী

লকডাউন পরিস্থিতি ও খাদ্যসংকটের কথা বিবেচনা করে ২২ মার্চ মনীষা ও তাঁর দল ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাঁচুক প্রতিটি মানুষ’ এ স্লোগান নিয়ে খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি ‘এক মুঠো চাল’ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। এক হাজার বাজারের ব্যাগ তৈরি করে নগরের বিভিন্ন বাড়িতে সরবরাহ করেন মুষ্টি চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। এতে মানুষের ব্যাপক সাড়া পড়ে। দুই-তিন দিন পর থেকেই ব্যাগে চাল, আলু নিয়ে তাঁদের কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে থাকে মানুষ। এই কর্মসূচির আওতায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা প্রতিদিন ২০০ পরিবারকে চাল, ডাল, আলু, তেল বিতরণ করেন।

মানবতার বাজার

করোনাকালে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আর্থিক সংকটের কারণে তাঁদের সহায়তার জন্য বাড়ি বাড়ি মুষ্টি চাল সংগ্রহ করে নগরের ফকিরবাড়ি রোডের একটি স্কুলমাঠে খোলেন বিনা মূল্যের বাজার কার্যক্রম। নগরের ফকিরবাড়ি সড়কের মাতৃছায়া স্কুলমাঠে ‘মানবতার বাজার’ নামে এই বাজার শুরু হয়। ১২ এপ্রিল থেকে এখানে মাস্ক, ওষুধ ছাড়াও চাল, ডাল, তেল, আলু, আটা, লবণ, বিভিন্ন সবজি, ডিমসহ ১৭টি খাদ্যপণ্য বিনা মূল্যে বিতরণ শুরু করেন। গড়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক পরিবারকে এই বাজার থেকে প্রায় ৫০০ টাকার বাজার খাদ্যসহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়।

ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের উদ্বোধন করছেন মনীষা চক্রবর্তী

প্রায় পাঁচ মাস মাতৃছায়া স্কুলমাঠের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিকবার এই বাজার পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া ‘মানবতার ঈদ বাজার’ নামে ঈদুল ফিতরে লাচ্ছা সেমাই, দুধ, চিনি পৌঁছে দেন ২ হাজার পরিবারে। ঈদুল ফিতরের আগে ১০০ এতিমখানার বাচ্চাদের নতুন পোশাক বিতরণ করেন তাঁরা। ১০টি এতিমখানায় খাবার এবং বেতন না পাওয়া ৫০ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ২ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করেন। ঈদের দিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ২ হাজার ৫০০ দুস্থ পরিবারে রান্না করা উন্নত খাবার বিতরণ করেন। এ ছাড়া নগরের অক্সফোর্ড মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলের বেতন না পাওয়া ৮৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ৩ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করেন। ঈদ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবের ৫০ জন শ্রমিককে ১ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করেন।

কোরবানি ঈদে ১ হাজার পরিবারকে চাল, মাংস বিতরণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৫০০ প্যাকেট রান্না করা খাবারের আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার সময় ‘মানবতার শারদীয় উৎসব’ নামে ২০০ দুস্থ সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীকে শাড়ি এবং রান্না করা খাবার বিতরণ করেন।

১০টি ইজিবাইকের সঙ্গে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে যোদ হওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি

বরিশাল শহর ছাড়াও মুলাদি, গৌরনদী, বাবুগঞ্জ (গুঠিয়া), বরগুনা, পটুয়াখালীতেও মানবতার বাজার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

শিশুদের খাদ্যসংকট সমাধানে মানবতার বাজারে ‘শিশু খাদ্য কর্নার’ করা হয়। এখান থেকে যেসব পরিবারে ৫ বছরের নিচে বাচ্চা আছে, তাদের পর্যাপ্ত শিশুখাদ্য প্রদান করা হয়। এভাবে করোনাকালে মোট ৭৬০ পরিবারকে শিশুখাদ্য বিতরণ করেন।
করোনা দুর্যোগে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় ‘বরিশালের কোনো জমিই থাকবে না পতিত, সবুজে সবুজে ভরে উঠুক প্রতিটি আঙিনা’—এই স্লোগান সামনে রেখে মনীষা ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবক দল মোট ১২ হাজার সবজি, লেবু, ফুল ও ফলের চারা এবং বীজ বিতরণ করেন।

প্রথম আলোর মুখোমুখি মনীষা

করোনাকালের এসব কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের দুর্যোগের সময় যদি মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হই, তাহলে সবকিছু বৃথা হয়ে যাবে। এ রাজনীতিরও কোনো মূল্য থাকবে না। তাই আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে থাকতে। জেলা বাসদের আহ্বায়ক ইমরান হাবিবের তত্ত্বাবধানে আমাদের সংগঠনের ছাত্র-শ্রমিক, নারী কর্মীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। দেশ-বিদেশ থেকে সামর্থ্যবান ও মানবিক ব্যক্তিরা এবং আমাদের পার্টির কর্মীরা এতে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

আমরা মাত্র ২২ হাজার টাকা হাতে নিয়ে কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তার কাজ করেছি, যা আমাদের কাছেও অভাবনীয় মনে হয়। আমি মনে করি ন্যায়নীতি-ভালোবাসা, মানুষ আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে এটা সম্ভব।
মনীষা চক্রবর্তী

মনীষা বলেন, ‘আমরা মাত্র ২২ হাজার টাকা হাতে নিয়ে কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তার কাজ করেছি, যা আমাদের কাছেও অভাবনীয় মনে হয়। আমি মনে করি ন্যায়নীতি-ভালোবাসা, মানুষ আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে এটা সম্ভব। এই কার্যক্রম চালাতে গিয়ে আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে। অনেক বাধা এসেছে। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা, সমর্থনে সেসব চক্রান্ত সফল হয়নি। যেকোনো দুর্যোগে আমরা এভাবে মানুষের পাশে থাকতে চাই, থাকব।’

করোনাযোদ্ধা মনীষার বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘মূলত রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ, মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা, সব মানবিক বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে এখন চিরায়ত সেই চরিত্র নেই। রাজনীতির এই আকালের মধ্যেও মনীষা চক্রবর্তীর মতো একজন রাজনৈতিক কর্মী সীমিত সামর্থ্য নিয়ে রাজপথের সংগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা অভাবনীয়। এতে আমাদের অনেক হতাশার মধ্যেও আশা জাগায়।’