অ্যাম্বুলেন্স আর কাফনের কাপড় নিয়ে সদা প্রস্তুত ২০-২২ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগীর মৃত্যুর খবর পেতেই ছুটছেন হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে প্রথমেই মরদেহের গোসল করিয়ে নেন তাঁরা। পরে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যান কবরস্থানে। তারপর জানাজা। শেষে পরম যত্নে সেই মরদেহ শুইয়ে দেওয়া হয় কবরে। সেসব দেখতে দেখতে অন্তিম যাত্রায় পাশে থাকতে না–পারা স্বজনেরা অদূরে দাঁড়িয়ে ফেলছেন চোখের পানি।
চট্টগ্রামে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের হয়ে করোনায় মারা যাওয়া রোগীর লাশ ধোয়া থেকে কাফন–দাফন সবকিছু করছেন এই স্বেচ্ছাসেবকেরা।
বিভিন্ন জায়গায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর দাফন করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কোথাও কোথাও স্বজনদের সঙ্গে না পাওয়ার খবরও বের হচ্ছে। সেখানে এই স্বেচ্ছাসেবকেরা যেন হয়ে উঠেছেন নিঃসঙ্গ করোনা রোগীর শেষযাত্রার সঙ্গী। তাঁরা গত এক মাসে করোনায় মারা যাওয়া ২৩ জনকে দাফন করেছেন।
>গত এক মাসে করোনায় মারা যাওয়া ২৩ জনকে দাফন করেছেন চট্টগ্রামের আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের কর্মীরা।
১৯৯৮ সালে জনসেবার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের নানুপুর জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়ার তৎকালীন প্রধান পরিচালক মাওলানা জমির উদ্দিন (রহ.) আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। বাবার স্মৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তাঁর মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন তাঁরই সাত সন্তান। করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের মরদেহের নানা অবহেলার খবর দেখে এই সন্তানেরা বসেন তাঁদের মায়ের সঙ্গে। সবকিছু জেনে সেই বৈঠকে মা তাঁদের করোনা রোগীদের দাফনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা গত ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিন তাঁরা সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ও সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারাও যোগ দেন। সেই বৈঠকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম, জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিসের সমন্বয়ে এই সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের লাশ দাফনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। মেয়রের উদ্যোগে নগরের হোটেল সৈকতে এই স্বেচ্ছাসেবকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তবে স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, অ্যাম্বুলেন্সের খরচ, কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করছে ওই সংস্থাটিই। এক মাস ধরে ওই হোটেলই হয়ে উঠছে স্বেচ্ছাসেবকদের ঠিকানা। সেখান থেকেই কখনো করোনায় আক্রান্ত রোগীর বাড়ি, কখনো হাসপাতাল কখনোবা কবরস্থানে ছুটছেন তাঁরা।