‘জারত দর দর করিয়া কাঁপিছিনু। কারোঠে কম্বল পাওনি। এলা কম্বল খান উরিমো (গায়ে দেব), জার বাপ বাপ করিয়া পালাবে।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে আজ মঙ্গলবার এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গিলাবাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ নারী গুলজাহান বেওয়া।
আজ বেলা ১১টায় মেঘের আড়ালে লুকানো ছিল সূর্যের মুখ। শীতল হাওয়া উপেক্ষা করে উপজেলার গোলাবাড়ি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে হাজির হন নানা বয়সের অসহায় ও শীতার্ত নারী-পুরুষ। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কম্বল তুলে দেন তাঁদের হাতে। বন্ধুসভার সদস্যরা গত রবি ও সোমবার সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি, মাতৃগাঁও, ফেরসাডাঙ্গী ও হরিনারায়ণপুর গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করেন। পরে ২২৫ জনের হাতে কম্বল বিতরণের স্লিপ তুলে দেওয়া হয়। আজ তাঁদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যথায় ভুগছেন ফেলানী বেগম (৮৫)। শীতে গরম কাপড় না থাকায় তাঁর সেই কষ্ট আরও বেড়ে যায়। প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে তিনি জানালেন, এই শীতে কম্বল ছিল না। রাতে মনে হতো ঠান্ডা হুল ফোটাচ্ছে। ঘুমাতে পারতেন না। নতুন কম্বলে আজ ভালো ঘুম হবে।
মাতৃগাঁওয়ের একটি জীর্ণ ঘরে বসবাস রাজেশ্বরী রানীর (৬৮)। রাতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঢোকা বাতাসে কাতর হয়ে পড়েন তিনি। কম্বল পেয়ে রাতের হিম বাতাস থেকে রক্ষা পাবেন বলে জানালেন রাজেশ্বরী।
ঠান্ডায় মোর ছুয়া (ছেলে) কাঁপিতে থাকে। গরম রাখিবার তানে ওক বুকত করিয়া ঘুমাছিনু। কম্বল পায়ে এলা ছুয়ার আরাম হইল।আয়েশা বেগম, শীতার্ত নারী
করোনাকালে আর্থিক সংকটের কারণে ফেরসাডাঙ্গী গ্রামের আয়েশা বেগম (৩৯) তাঁর আট মাস বয়সী মেয়ের জন্য গরম কাপড় কিনতে পারেননি। কম্বল পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। আয়েশা বেগম বলেন, ‘ঠান্ডায় মোর ছুয়া (ছেলে) কাঁপিতে থাকে। গরম রাখিবার তানে ওক বুকত করিয়া ঘুমাছিনু। কম্বল পায়ে এলা ছুয়ার আরাম হইল।’
কম্বল বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন গিলাবাড়ি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ই হাবিব, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নাসিরুল ইসলাম, জেলা বন্ধুসভার সভাপতি ফরহাদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক লায়লা ফেরদৌস রোজা, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহরাব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক পিয়াল হাসান, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক রুবিনা আকতার, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মীম আহমেদ, সদস্য ফজলে নুর ইমন, ফাহমিদ মুজিব মিহুন, রেজওয়ান করিম তানজিম।
নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুসভার সদস্যরা জেলা শহর থেকে গ্রামের এত ভেতরে এসে কীভাবে দুস্থ মানুষদের তালিকা তৈরি করেছেন, এটা দেখেই অবাক লাগছে।’
প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ই হাবিব বলেন, প্রথম আলো সব সময় সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে। বন্যার সময় তারা পীড়িত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়। শীতের সময় শীতার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কম্বল নিয়ে হাজির হয়। গণিত অলিম্পিয়াড সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এখন স্বপ্ন দেখায়। প্রথম আলোর উদ্যোগের কারণেই অ্যাসিডদগ্ধ নারীরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। তাঁদের অ্যাসিডবিরোধী অবস্থানের কারণেই দেশে অ্যাসিড নিক্ষেপের হার কমে গেছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগ আর ভালোভাবে চলুক, এটাই প্রত্যাশা।
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।