মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সারা রাতের টানা ভারী বর্ষণে এক হাজার হেক্টর জমির রোপিত আউশ ধান তলিয়ে গেছে। বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিমজ্জিত হয়েছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। অনেক গ্রামের নিচু স্থানের বাড়িঘর পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জে ধলাই নদসহ সব পাহাড়ি ছড়ার পানি বেড়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানিতে কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর সেতু এলাকাতেও অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়েছে। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে হওয়া বজ্রপাতে ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে রাত ১২টা থেকে গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত কমলগঞ্জ ছিল বিদ্যুৎহীন। বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক সড়ক নিমজ্জিত হয়েছে। আকস্মিক ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার শমশেরনগর, পতনঊষার ইউনিয়নের বেশ কিছু বাড়িঘর পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে হওয়া বজ্রপাতে ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে রাত ১২টা থেকে গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত কমলগঞ্জ ছিল বিদ্যুৎহীন। পরে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করে শুক্রবার বেলা ৩টায় কমলগঞ্জ সদরসহ উপজেলার অন্যান্য এলাকায় আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হয়। ভারী বৃষ্টিতে কমলগঞ্জ উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অনেক এলাকায় রোপণ করা আউশ ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়।
গতকাল দুপুর থেকে কমলগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, আলীনগর ইউনিয়নের শমশেরগর-কমলগঞ্জ সড়কের স্টিল সেতুর পূর্ব দিকের ভাঙন দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে আলীনগর, শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়িতে পানি ঢুকছে। আদমপুর ইউনিয়নের লাউছড়ার তীর উপচে পানি প্রবেশ করেছে ফসলি জমিতে। মাধবপুর ইউনিয়নে জবলা ছড়ার তীর উপচে পানি প্রবেশ করেছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমিতে।
শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষক গৌতম পাল, গৌরাঙ্গ পাল, নাইয়র মিয়া, বিষ্ণু পাল, সিদ্দেক আলী ও পতনঊষার ইউনিয়নের কৃষক তবারক হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য কবির আহমদ খান বলেন, এভাবে টানা ভারী বৃষ্টিপাত এর আগে কখনো তাঁরা দেখেননি। রাতের টানা ভারী বৃষ্টির সঙ্গে লাঘাটা ছড়ার প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরোনো ভাঙা এলাকা দিয়ে প্রবেশ করা পানিতে তাদের আউশ ধান তলিয়ে গেছে। আলীনগর ইউনিয়নের কামুদপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গ্রামে অনেকগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার সিংহ বলেন, টানা ভারী বৃষ্টির পানিতে ও লাঘাটাসহ কয়েকটি পাহাড়ি ছড়ার তীর উপচে ঢলের পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জে ৮০০ থেকে ১ হাজার হেক্টর জমির রোপিত আউশ ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে রাতে আর বৃষ্টি না হলে ফসলি জমি থেকে পানি নেমে যাবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে কমলগঞ্জে ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের বেশ কয়েকটি খুঁটির ইনস্যুলেটর ভেঙে গেলে রাত ১২ থেকে শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম মোবারক হোসেন সরকার বলেন, বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করতে বিলম্ব হয়েছে।