চারদিক শব্দহীন চা-বাগানের উঁচু–নিচু বেশ কয়েকটি টিলায় চায়ের গালিচা। মাথার ওপরে নীল আকাশ। আকাশের সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে নিচের লেকের পানিতে। আর লেকের পানিতে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখি। চারপাশে যত দূর চোখ যায়, ছোট-বড় পাহাড়ি টিলা ঢাকা চা-বাগান। এরই মধ্যে টলটলে পানির অপরূপ লেক। চা-বাগানের শ্রমিকদের কাছে যে লেকের নাম ‘বিসলার বান’। তবে এর প্রকৃত নাম হলো ক্যামেলিয়া লেক।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগরে ব্রিটিশ কোম্পানি ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন শমশেরনগর চা-বাগানে দৃষ্টিনন্দন এ লেকের অবস্থান। এ বাগানের আয়তন প্রায় ৪৩২৬ দশমিক ৪৭ একর। চা-বাগানগুলোতে সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে ছাঁটাই করা চা-গাছে পানি সেচের জন্য চা-বাগানের মধ্যে ছোট-বড় লেক দেখতে পাওয়া যায়। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে লেকের কাছে যেতে দেখা মেলে অনেক বানর গাছে গাছে ঝুলছে। শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়ক ধরে দক্ষিণে তিন কিলোমিটার সামনে গেলেই পাওয়া যায় ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। ডানকান ব্রাদার্সের ১৫টি চা-বাগানের শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার সদস্য, কর্মচারী ও ব্যবস্থাপকদের চিকিৎসাসেবা দানে ১৯৯৪ সালে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ডানকান ব্রাদার্সের মূল কোম্পানি ক্যামেলিয়া পিএলসির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগরে ব্রিটিশ কোম্পানি ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন শমশেরনগর চা-বাগানে দৃষ্টিনন্দন এ লেকের অবস্থান।
তবে হাসপাতালটিকে পেছনে রেখে আরও দুই কিলোমিটার চায়ের গালিচার মধ্য দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে এগোলেই চোখে পড়ে অপরূপ ক্যামেলিয়া লেকটি। এ লেখের অনেকগুলো শাখাও রয়েছে। লেকের দুই পাশজুড়ে অনেক গাছগাছালি। লেকের পানির ওপর একটি পাকা পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
সাধারণত লেক ও গলফ মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে সহজে কাউকে, বিশেষ করে বড় দলকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তবে আগাম যোগাযোগ করে কিছু শর্তাবলি মেনে আসলে ছোট ছোট দলকে ক্যামেলিয়া লেকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।শমশেরনগর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্র
ক্যামেলিয়া লেকটি সবার কাছে এখন সুপরিচিত। যাওয়ার পথটাও নিরিবিলি। ভ্রমণপিপাসুরা সেখানে যেতে পারেন। খোলামেলা এ লেকের পানিতে গোসল করা, সাঁতার কাটা, লেকের পাশে পাহাড়ে ওঠা, তা ছাড়া ছবি তোলার জন্য খুবই সুন্দর পরিবেশ। ফেরার পথেই আবার দেখা মেলে শমশেরনগরের মনোমুগ্ধকর গলফ মাঠ। এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন পর্যটক-ভ্রমণপিপাসুরা। সেখানে বসে সঙ্গে আনা খাবার খেতে আনন্দ যেন দ্বিগুণ বাড়ে। তবে শমশেরনগর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, সাধারণত লেক ও গলফ মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে সহজে কাউকে, বিশেষ করে বড় দলকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তবে আগাম যোগাযোগ করে কিছু শর্তাবলি মেনে আসলে ছোট ছোট দলকে ক্যামেলিয়া লেকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেনে মৌলভীবাজার জেলা সদর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও শমশেরনগর আসা যায়। এরপর শমশেরনগর বাজার থেকে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার বা মাইক্রো নিয়ে সহজেই ক্যামেলিয়া লেকে যাওয়া যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, কমলগঞ্জের চা-বাগান ও চা–বাগানের লেকগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। তবে লেক পরিদর্শন করতে কিছু নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট চা-বাগান কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।