দাম্পত্যজীবনে অসুখী ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার লিটন মালিথা (৪০)। এ বিষয়ে সমাধান পেতে তিনি কথিত তান্ত্রিক কবিরাজ আবদুল বারেকের (৬৩) দ্বারস্থ হন। আট বছর ধরে লিটন মালিথা ওই কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নেন। অবশেষে কবিরাজ তাঁকে বলেন, তিনি যদি কারও পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও চোখের মণি জোগাড় করতে পারেন, তাহলে তিনি ‘অনন্ত যৌবনের’ অধিকারী হবেন।
কবিরাজের পরামর্শ শুনে মাঠে নামেন লিটন। নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে কখনো রিকশাচালক, কখনো কৃষিশ্রমিক আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন তিনি। তবে প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছেন। উপায় না পেয়ে লিটন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নকিম উদ্দিন মোল্যা (৬০) নামের এক কৃষককে শ্বাসরোধে হত্যা করে তিনি অঙ্গগুলো সংগ্রহ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশের মিডিয়া সেলের আয়োজনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। ব্রিফ করেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।
গত ৩০ মে যশোরের বাঘারপাড়ার পাইকপাড়া গ্রাম থেকে পুরুষাঙ্গ কাটা এবং ডান চোখ উপড়ানো অবস্থায় নকিম উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নকিম উদ্দিন বাঘারপাড়া উপজেলার ধুপখালী গ্রামের দলিল উদ্দিন মোল্যার ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. মাজহারুল ইসলাম পরদিন ৩১ মে বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্তে নেমে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লিটন মালিথা ও কবিরাজ আবদুল বারেককে গ্রেপ্তার করে।
লিটন মালিথা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোহাম্মদ জামা গ্রামের হানিফ আলী মালিথার ছেলে এবং আবদুল বারেক চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুরের মোজাম্মেল হকের ছেলে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল যশোর, মাগুরা ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। পরে গতকাল বুধবার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা থেকে লিটন মালিথাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে লিটনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খড়ের গাদার ভেতর থেকে নকিম উদ্দিনের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও চোখের মণি উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে লিটনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রাম থেকে তান্ত্রিক কবিরাজ আবদুল বারেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে লিটন মালিথা ও আবদুল বারেককে হাজির করা হয়। এ সময় লিটন মালিথা বলেন, তিনি বিবাহিত জীবনে অসুখী। তাই তিনি কবিরাজ আবদুল বারেকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কবিরাজ তাঁকে পুরুষের লিঙ্গ, অণ্ডকোষ ও চোখের মণি জোগাড়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ কারণেই তিনি নকিম উদ্দিনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর অঙ্গগুলো সংগ্রহ করেন।
আবদুল বারেক বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে কবিরাজি করছি। লিটন আমার কাছে আট বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি তাঁকে ওই তিনটি অঙ্গ জোগাড় করতে বলি। তবে আমি তাঁকে জীবিত মানুষ হত্যা করে অঙ্গ আনতে বলিনি। বলেছি, যেখানে পোস্টমর্টেম হয়, সেখান থেকেই ম্যানেজ করা সম্ভব।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ২৬ মে বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলা বাজারে ধানকাটার শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার সুবাদে নকিম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ২৯ মে রাতে তাঁকে টার্গেট করে কবিরাজের সঙ্গে তিনি মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। কবিরাজের নির্দেশেই তিনি নকিম উদ্দিনকে খুন করে শরীরের ওই অঙ্গ নিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে তান্ত্রিক কবিরাজির বিভিন্ন সরঞ্জাম, দুটি মুঠোফোন সেট এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রশি ও চাকু উদ্ধার করেছে।